1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
দালাইলুল খায়রাত
Reporter Name
  • ৬ মার্চ, ২০২১

প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দরূদ শরীফের সব থেকে নির্ভরযোগ্য ও প্রসিদ্ধ গ্রন্থ হলো দালাইলুল খায়রাত। এর পূর্ণাঙ্গ নাম দালাইলুল খায়রাত ওয়া শাওয়ারিকুল আনওয়ার ফী-যিকরিস সালাতি আলান নাবিয়্যিল মুখতার। কিতাবটি রচনা করেছেন শাযূলীয়া তরীকার বিখ্যাত সূফী আবূ আব্দিল্লাহ মুহাম্মদ ইবনু সুলায়মান আল-জাযূলী (র.) (জন্ম: ৮০৭ হি., ওফাত: ৮৭০ হি.)। তিনি আফ্রিকা মহাদেশের মরক্কোর অধিবাসী ছিলেন।
এ কিতাব রচনার কারণ হলো, ইমাম জাযূলী (র.) ফাস শহরে অবস্থান করছিলেন। নামাযের সময় উপস্থিত হলে তিনি উযূ করার জন্য একটি কুয়ার পাশে গেলেন। কিন্তু পানি অনেক নিচে ছিল যা হাত দিয়ে নাগাল পাওয়া সম্ভব নয়, আবার তিনি আশ-পাশ খোঁজাখোজি করে এমন কোনো কিছুই পেলেন না যা দিয়ে তিনি পানি উত্তোলন করবেন। তিনি কিছুটা অস্থির হয়ে গেলেন। এমতাবস্থায় দেখলেন একজন বালিকা উঁচু ভূমি থেকে তার দিকে আসছে। কাছে এসে পরিচয় জানতে চাইল। ইমাম জাযূলী তার পরিচয় দিলেন। জাযূলীকে চেনার পর বালিকাটি বললো, লোকজন আপনার এতো প্রশংসা করে অথচ আপনি একটি কুয়া থেকে পানি তুলতে পারছেন না। তখন বালিকা কুয়ার মধ্যে থুথু নিক্ষেপ করলেন। সাথে সাথে কুয়ার পানি উপরে উঠে এলো। শায়খ জাযূলী উযূ করে বালিকার কাছে জানতে চাইলেন তোমাকে কসম দিয়ে বলছি, আমাকে বলো, তুমি এই সম্মান কীভাবে অর্জন করলে? বালিকা বললেন, জন-মানবহীন প্রান্তরে পথ চলার সময় বন্যপ্রাণীরা যার পিছু পিছু আসত তার প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠের মাধ্যমে। বালিকার মুখে মনোমুগ্ধকর এমন কথা শুনে ইমাম জাযূলী (র.) এর মনে দরূদ শরীফের প্রতি নতুনভাবে আগ্রহ সৃষ্টি হলো। তিনি দরূদ শরীফ সংকলনের নিয়ত করলেন এবং কিতাব আকারে সন্নিবেশিত করেন।
ইমাম জাযূলী (র.) দালাইলুল খায়রাত কিতাবে হাদীস শরীফে বর্ণিত বিভিন্ন দরূদ, সাহাবায়ে কিরাম, তাবিঈন, সালফে সালিহীনের পঠিত দরূদ শরীফগুলো সংকলন করেছেন। এর বাইরে তিনি নিজে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শান-মান, প্রশংসায় পরিপূর্ণ আরবী সাহিত্যের বালাগাত-ফাসাহাত সমৃদ্ধ উচ্চ মার্গীয় শব্দমালা দ্বারা অসংখ্য দরূদ রচনা করেছেন।
ইমাম জাযূলী (র.) তার কিতাবটি আট অংশে বিভক্ত। সোমবার থেকে প্রথম অংশ শুরু করতে হয়। এভাবে সাত দিনের জন্য সাত অংশ নির্ধারিত। অষ্টম অংশকে তরীকার শায়খদের নিয়ম অনুযায়ী কেউ রবিবারের সাথে আবার কেউ সোমবারের সাথে পাঠ করেন। প্রাত্যহিক ওযীফা পাঠের পূর্বে আল আসমাউল হুসনা, আসমাউন নবী, দুআয়ে ইফতিতাহ পাঠ করতে হয়। কিতাবের শেষে ইমাম জাযূলী (র.) এর লিখিত দরূদ শরীফের ওসীলা নিয়ে একটি দুআ সন্নিবেশিত রয়েছে। পূর্ণ ওযীফা খতমের পর এই দুআ পাঠ করতে হয়। শাযুলিয়া তরীকার শায়খগণ দালাইলুল খায়রাতকে দুই দিনে খতম করার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকেন।
দালাইলুল খায়রাত কিতাবটি মহান আল্লাহর দরবারে এতটাই মকবূল যে, পৃথিবীর প্রায় সকল তরীকার অনুসারীরা এ কিতাবটি গুরুত্বের সাথে তিলাওয়াত করে থাকে। বিশেষত শাযুলিয়া তরীকায় এ কিতাবকে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয়। মরক্কোর বিখ্যাত হাদীস বিশারদ শায়খ আব্দুল্লাহ আত-তালিদী (র.) বলেন, পূর্ব থেকে পশ্চিমে লক্ষ লক্ষ মুসলমান এ কিতাবটি যাচাই করেছেন, এর কল্যাণ এবং উপকারিতা বহু শতাব্দি থেকে পরীক্ষিত। ‘আন নিআমুল জালাইল’ কিতাবে উল্লেখিত আছে, “নেককার বুযুর্গগণ কর্তৃক পরীক্ষিত যে, দালাইলুল খায়রাত পাঠের মাধ্যমে অভূত কল্যাণ লাভ হয়, সফলতার দ্বার উন্মুক্ত হয়, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দীদার নসীব হয়ে থাকে”। আল্লাহওয়ালাগণ এই কিতাবের আধ্যাত্মিক উপকারিতা প্রত্যক্ষ করেছেন। মুসলমানরা খুবই আগ্রহ নিয়ে একাকী বা সম্মিলিতভাবে তাদের ঘরে বা মসজিদে এ কিতাব তিলাওয়াত করে আসছেন। আমাদের ভারতীয় উপমহাদেশের তরীকা তাসাওউফের সাথে দালাইলুল খায়রাত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এখানকার সকল তরীকার অনুসারীরাই এ কিতাবের প্রতি গুরুত্বারোপ করে আসছেন। দেওবন্দী ধারার তরীকা তাসাওউফেও এ কিতাবকে ওযীফা হিসেবে পাঠ করা হয়। দেওবন্দী ধারার প্রসিদ্ধ বুযুর্গ ও মুহাদ্দিস সায়্যিদ হুসাইন আহমদ মাদানী তার ‘আশ-শিহাবুস সাকিব’ কিতাবে লেখেন “দালাইলুল খাইরাত আমাদের বুযুর্গদের ওযীফা”। এ ধারার অন্যতম বুযুর্গ মাওলানা রশীদ আহমদ গাঙ্গুহী ছাহেব দালাইলুল খায়রাত তিলাওয়াতের ইজাযত সম্বলিত সনদ প্রদান করতেন। (তাযকিরাতুর রশীদ)
শামসুল উলামা হযরত আল্লামা আবদুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলী ছাহেব কিবলাহ (র.) তাঁর উস্তায হযরত মাওলানা খলীলুল্লাহ রামপুরী (র.) এবং তাঁর পীর ও মুরশিদ হযরত শাহ ইয়াকুব বদরপুরী (র.) থেকে এ কিতাবের ইজাযত ও সনদ লাভ করেছিলেন। তিনি বহু মানুষকে ইজাযত ও সনদ প্রদান করে গেছেন। সম্প্রতি মুরশিদে বরহক হযরত আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী বড় ছাহেব কিবলাহ ফুলতলী তিন হাজারের অধিক মুরীদীন মুহিব্বীনকে এ কিতাবের সনদ প্রদান করেছেন।
পৃথিবীর প্রসিদ্ধ অনেক আলিমে দ্বীন বুযুর্গ এ অনবদ্য কিতাবটির ব্যাখ্যাগ্রন্থ লিখেছেন। তন্মধ্যে অন্যতম হলো আবূ যায়দ আব্দুর রহমান ইবনে মুহাম্মদ আল ফাসী (র.) এর ‘আল আনওয়ারুল লামিআত ফিল কালামি আলা দালাইলিল খায়রাত’, মুহাম্মদ আল মাহদী আল ফাসী (র.) এর ‘মাতালিউল মাসাররাত বি জালাই দালাইলিল খায়রাত’ শায়খ ইউসুফ নাবহানীর ‘আদ-দালালাতুল ওয়াদ্বিহাত আলা দালাইলিল খায়রাত’, শায়খ আব্দুল মাজিদ আশ শারনুবী আযহারীর ‘শারহু দালাইলিল খায়রাত’। এগুলোর মধ্যে আল্লামা মুহাম্মদ আল মাহদী ফাসীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ খুবই প্রসিদ্ধ। তিনি এই কিতাব ছাড়াও দালাইলুল খায়রাতের উপর আরো দুটি কিতাব লিখেছেন।
দালাইলুল খায়রাত কিতাবটি অসংখ্য কল্যাণ এবং বরকতময় দরূদকে একিভূত করেরছ। বিশেষত এ কিতাবে বলিষ্ঠ শব্দ চয়নে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর উপর দুরূদ থাকায় এর পাঠক এসকল দরূদের নূরানিয়ত লাভ করতে সক্ষম হন। হাদীসের নির্ভরযোগ্য অনেক ইমাম রিযক বৃদ্ধির জন্য দালাইলুল খায়রাতের শুক্রবারের অংশ পাঠ করতেন এবং এর মাধ্যমে তারা বিস্ময়কর ফলাফল প্রত্যক্ষ করেছেন। এ কিতাব সম্পর্কে আল্লামা ফাসী (র.) বলেন, দালাইলুল খায়রাতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা তার অনেক বান্দাহকে উপকৃত করেছেন। এ কিতাবটি এতো গ্রহণযোগ্য হয়েছে যে, দূর-দূরান্তের দেশগুলোতেও এ কিতাব পৌঁছেছে, গ্রামে কিংবা শহরে সবখানেই এ কিতাব প্রসিদ্ধ। লোকজন এই কিতাবের প্রতি এতো বেশি ঝুকেছে দরূদ শরীফের অন্য কোনো কিতাবের প্রতি এরূপ হয়নি।

 

ফেইসবুকে আমরা...