পীর বা মুরশিদ কেন মানতে হবে? পীর বা মুরশিদ পরকালে কোনো সুপারিশ বা উপকার করতে পারবে কি?
প্রশ্নকারী: বদরুল ইসলাম
ডাইকের বাজার, নোয়াগাঁও, ফেঞ্চুগঞ্জ, সিলেট
জবাব: আত্মার পরিশুদ্ধিতা অর্জন করার জন্য যে সকল সালিহ তথা নেককার জ্ঞানী ব্যক্তিকে পথপ্রদর্শক কিংবা শিক্ষকরূপে মান্য করা হয় তাদের পীর কিংবা মুরশিদ বা শাইখ বলা হয়। পবিত্র কুরআন মাজীদে আত্মার পরিশুদ্ধিতার প্রতি যেমন গুরুত্বারোপ করা হয়েছে তেমনি আত্মা-পরিশুদ্ধ ব্যক্তির অনুসরণ করার তাকীদ করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন,
وَاتَّبِعْ سَبِيْلَ مَنْ أَنَابَ إِلَيَّ
-যে আমার অভিমুখী হয়েছে তার পথ অনুসরণ কর। (সূরা লুকমান, আয়াত-১৫)
মহান আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেছেন, يَا أَيُّهَا الَّذِيْنَ آمَنُوْا اتَّقُوْا اللهَ وَكُوْنُوْا مَعَ الصَّادِقِيْنَ
-হে ঈমানদারগণ, আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সঙ্গী হও। (সূরা তাওবাহ, আয়াত-১১৯)
মহান আল্লাহ তাআলা আরো ইরশাদ করেছেন, مَن يَهْدِ اللهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِ ۖ وَمَنْ يُضْلِلْ فَلَنْ تَجِدَ لَهُ وَلِيًّا مُّرْشِدًا
-আল্লাহ যাকে সৎপথে চালান, সেই সৎপথপ্রাপ্ত এবং তিনি যাকে পথভ্রষ্ট করেন, আপনি কখনও তার জন্যে ওলী (সাহায্যকারী) মুরশিদ (পথপ্রদর্শক) পাবেন না। (সূরা কাহাফ, আয়াত-১৭)
হযরত খিযির (আ.) এর সান্নিধ্যে মহান আল্লাহ তাআলার নির্দেশে হযরত মূসা (আ.) গিয়েছিলেন। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআন মাজীদে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেছেন, فَوَجَدَا عَبْدًا مِّنْ عِبَادِنَا آتَيْنَاهُ رَحْمَةً مِّنْ عِنْدِنَا وَعَلَّمْنَاهُ مِنْ لَّدُنَّا عِلْمًا- قَالَ لَهُ مُوسٰى هَلْ أَتَّبِعُكَ عَلٰى أَن تُعَلِّمَنِ مِمَّا عُلِّمْتَ رُشْدًا
-অতঃপর তারা আমার বান্দাহদের মধ্যে এমন একজনের সাক্ষাত পেলেন, যাকে আমি আমার পক্ষ থেকে রহমত দান করেছিলাম এবং আমার পক্ষ থেকে দিয়েছিলাম এক বিশেষ জ্ঞান। মূসা (আ.) তাকে বললেন, আমি কি এ শর্তে আপনার অনুসরণ করতে পারি যে, সত্যপথের যে জ্ঞান আপনাকে শেখানো হয়েছে, তা থেকে আমাকে কিছু শিক্ষা দেবেন। (সূরা কাহাফ, আয়াত-৬৫, ৬৬)
পবিত্র কুরআন মাজীদে একদল মানুষকে ওলী, আউলিয়া, মুরশিদ, সালিহীন, সাদিকীন, মুত্তাকীন, মুতাওয়াস্সিমীন ইত্যাদি উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাদের অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। তাঁরাই পীর, ওলী বা শাইখে তরীকত নামে আখ্যায়িত। সুতরাং তাদের অনুসরণ বা মান্য করা কুরআন শরীফের নির্দেশনা মানার’ই নামান্তর।
উল্লেখ্য যে, ইসলামী জ্ঞানের অন্যতম একটি প্রকার হচ্ছে ইলমে মারিফাত, যাকে ইলমে তাসাওউফ নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। ইলমে শরীয়ত অর্জনের জন্য যেমন শিক্ষাগুরুর শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন তদ্রুপ ইলমে মারিফাত অর্জনের জন্য কামিল হক্কানী পীরের (ওলী, শায়খ) শরণাপন্ন হওয়া প্রয়োজন। হাদীসের কতিপয় বর্ণনায় রয়েছে সাহাবায়ে কিরামের কেউ কেউ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট থেকে উভয় বিদ্যা অর্জন করেছেন। সে ধারাবাহিকতায় আজ পর্যন্ত হক্কানী ওলীদের সংস্পর্শে উম্মতে মুসলিমাহ ইলমে মারিফাত অন্বেষণ করে আসছে। কেননা তারা হচ্ছেন প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পূর্ণ ওয়ারিস।
আল্লাহর প্রিয় নেককার বান্দাগণের মর্যাদার স্তর অনুযায়ী মহান আল্লাহ তাআলা তাদের অনেককে পরকালে সুপারিশ করার মর্যাদা প্রদান করবেন। ফলে তারা উক্ত মর্যাদা লাভে ধন্য হবেন এবং অনুসারীগণের জন্য আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতানুযায়ী সুপারিশ করবেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত আছে,
واذا رأوا انهم قد نجوا- فى اخوانهم يقولون: ربنا إخواننا كانوا يصلون معنا ويصومون معنا ويعملون معنا، فيقول الله تعالى: اذهبوا فمن وجدتم فى قلبه مثقال دينار من ايمان فاخرجوه.
-(আল্লাহর নেক বান্দাহরা) যখন দেখবেন তারা মুক্তি পেয়ে গেলেন তখন তারা তাদের মুমিন ভাইদের জন্য (যারা জাহান্নামী) আল্লাহর কাছে আবেদন করবেন, “হে আমাদের রব! তারা আমাদের সাথে নামায আদায় করেছে, সিয়াম পালন করেছে, আমাদের সাথে নেক আমল করেছে। তখন আল্লাহ তাআলা বলবেন, যাও, যাদের অন্তরে এক দিনার পরিমাণ ঈমান আছে তাকে বের করে নিয়ে আস।”
এ হাদীস থেকে প্রমাণ হয় যে, নেককারগণ সুপারিশ করবেন এবং তাদের সুপারিশে অন্যরা উপকৃত হবেন।
জবাবদাতা: প্রিন্সিপাল ও খতীব, আল ইসলাহ ইসলামিক সেন্টার
মিশিগান, যুক্তরাষ্ট্র