1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
রোযায় গৃহিণীর রোজনামচা
তাওহিদা ফেরদৌস তান্নি
  • ১ মে, ২০২১

বছরে একবার আসে মাহে রামাদান। ফরয ইবাদাতের পাশাপাশি নফল ইবাদাতে মনযোগী হন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা। নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকলের দৈনন্দিন কার্যপ্রাণালিতে আসে বৈচিত্র্য। বয়সভেদে কাজেও কাজকর্মেও থাকে ভিন্নতা। ছোটবেলায় যেভাবে রামাদান কাটাতাম আজকের দিন তেমন নয়। ঘুম থেকে ওঠেই মক্তবে যাওয়ার প্রস্তুতি চলতো। দারুল কিরাতের সেই সোনামাখা দিনগুলি কি আর ফিরে আসবে? আমরা বিভিন্ন স্কুল মাদরাসায় পড়তাম কিন্তু গ্রামের সমবয়সি সকলেই আমার সহপাঠী এই দারুল কিরাতের সুবাদে। যখন দিনে তিন চারটে রোযা রাখতাম সে সময়টি ছিল আরো সুখের। খেজুরের বীজ সংগ্রহ করে চায়ের কাপে ভিজিয়ে রাখতাম। পানের সাথে খেজুর বীজ চিবিয়ে খাওয়ার স্বাদ ছিল আলাদা। এখন আর সেইদিন নেই। এখন যেমন ফরজ হিসেবে রোযা রাখতে হয় তেমনি পারিবারিক দায়দায়িত্বে ব্যস্ত সময় পার করি। রামাদানে গৃহিণীদের জন্য লিখতে ইচ্ছে হলো। তাই এ অগোছালো উপস্থাপনা।
এ মাসে গৃহকর্ত্রীদের জন্য কিছুটা কাজ বেড়ে যায়। রামাদানে যেমনি সন্তানদের সময় দিতে হয় তেমনি বয়স্ক মা-বাবা, শ্বশুর শাশুড়িদের প্রতিও বিশেষ খেয়াল রাখতে হয়। রামাদানে রাতের বেলা রোযাদারের ঘুম কম হয় তাই দেরিতে শয্যাত্যাগ করতে হয়। বাবা-মা ঘুমিয়ে থাকলে মক্তবে যাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত শিশুরা বিভিন্ন অভিনব কাজ করে বশে। তাই সাঁতার জানে না এসব শিশুদের প্রতি মনোযোগ রাখা দরকার। একটু অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। যেসব মহিলাদের ছোট বাচ্চা রয়েছে তাদের প্রতিও পরিবারের সদস্যদের সদয় হওয়া প্রয়োজন। রোযার দিনে তাদের কাজের চাপ কমাতে অন্তত শিশুকে কোলে নিয়ে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
এছাড়াও মহিলাদের নিজের জন্য কোরআন তিলাওয়াত ও নফল ইবাদাতের সময় বের করতে হয়। কিন্তু সময় নির্ধারণ করবেন কীভাবে। বড় পরিবার হলে মহিলারা পারস্পারিক সহযোগিতায় সহজে এসব করতে পারেন। ধরুন, একটি পরিবারে কর্মক্ষম দুইজন মহিলা আছেন। দুজন মহিলার মধ্যে একজন কোরআন তিলাওয়াত করবেন যুহরের নামাযের আগে তখন অন্যজন গৃহস্থালি করবেন। তিনি যখন নামায শেষ করে রান্নাঘরে যাবেন তখন অন্যজন নামায আদায় করে তিলাওয়াতে বসবেন। তিলাওয়াতের ক্ষেত্রে একটি পরামর্শ দিতে পারি। সাধারণত মাসে এক খতম করার উদ্দেশ্যে দিনে এক পারা তিলাওয়াত করি। বিশেষ কোন ব্যস্ততায় দুইদিন তিলাওয়াতে বসতে না পারলে বিশ রামাদানে দেখবেন আপনার খতম এখনও উনিশ পারায়। তাই যেদিন সময় বেশি পাবেন তিলাওয়াত একটু এগিয়ে রাখবেন।
এশা ও তারাবীহের নামাযের ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন। একই সাথে শিশুদের খাওয়ানো, ঘুম পাড়ানো ও রান্নাবান্না এসব কাজ প্রায় একই সময়ে উপস্থিত হয়। তাই আন্তরিকতার সাথে সময় ভাগাভাগি করে এসব কাজ করে নিতে হবে। পরিবারের লোকদের সহযোগিতা করাও ইবাদাত।
একটা কথা আমাদের মনে রাখা উচিত, রোযায় আমি যেমন কষ্ঠবোধ করছি, প্ররিশ্রমীদের জন্য এ কষ্ঠ আরোও বেশি হবে। তাই কোন কাজ একজনের জন্য ছেড়ে দিতে নেই। ছোট পরিবার হলে জায়া ও পতি সম্মিলিতভাবে কাজ করলে বোঝা অনেক হালকা হয়। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন, ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের সহায়ক। (সূরা তাওবা: ৭১) রাসূল সা. নিজেও নিজ গৃহের কাজে উম্মুল মুমিনিনদের সাহায্য করতেন। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি বকরির দুধ দোহন করতেন এবং নিজের কাজ নিজেই করতেন।’ (মুসনাদ আহমদ) তাই পুরুষরা রাসূল (সা.) এর সুন্নাত মনে করে গৃহস্থালি কাজে মহিলাদের সাহায্য করবেন। অধিকন্তু দায়িত্ববোধ তো আছেই।
রোযা অবস্থায় তরকারি রান্না করার সময় স্বাদ গ্রহণ করা যায় না। অনেক সময় খাবার সুস্বাদু নাও হতে পারে। এমতাবস্থায় খাবারে দোষত্রুটি না ধরাই ভালো। এটা থেকে রাঁধুনী অখুশি হন। আবার গুরুজনের অসুবিধার জন্য অনেক রাঁধুনী ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ফলে তাদের সাহরী ও ইফতার ব্যাহত হয়। আমরা এ সম্পর্কিত একটি হাদিস জানতে পারি। হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো খাবারের দোষত্রুটি ধরতেন না। তার পছন্দ হলে খেতেন আর অপছন্দ হলে রেখে দিতেন।’ (বুখারী ও ইবনে মাজাহ)
বিত্তবান পরিবারে অনেকে রোযার মাসের জন্য গৃহকর্মী নিয়োগ করে থাকেন। তাদের ওপর সকল কাজকর্ম ছেড়ে দিয়ে নিজেরা ইবাদাতে মশগুল হন। কাজের লোককে আপনি বেতন বোনাস দিবেন ঠিক কিন্তু এটা ভুলে গেলে চলবে না তারাও আমার মতো রোযা রেখেছে। অনেকে কাজের লোকের ইবাদাতের প্রতি গুরুত্ব দেন না। আবার অনেকে কোন ভুলের জন্য হাসি তামাশা করে থাকেন। তাই হাসির খোরাক না হতে গৃহকর্মীরা নিয়মিত নামায কাজা করেন। এরকম সাংঘাতিক কাজ থেকে বিরত থাকা জরুরি। আপনার বাড়িতে কাজের সময় যদি নামাযের সময় পার হয় এবং সে নামায কাযা করে তবে আপনিও এ দায়ভার থেকে মুক্ত নন। অধিকাংশ কাজের লোক পাওয়া যায়, যারা শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত লিখতে পড়তে যানেন না। এমনকি নামাযের জন্য চার ছয়টি সূরাও শুদ্ধ করে মুখস্ত বলতে পারেন না। তাদের প্রতিও খেয়াল রাখা জরুরি।
বলছিলাম গৃহিনীদের কথা। রুটিন করে সময়মতো কাজ না সারলে বেগ পেতে হয়। বাংলাদেশে অঞ্চলভেদে ইফতারিতে আছে বৈচিত্র্য। তবে সারাদিন রোযা রেখে নরম খাবার সকল রোযাদারেরই পছন্দ। এসব খাবারের ক্ষেত্রে রয়েছে হালিম, পায়েস ও খিচুড়ি। কম সময়ে এসব খাবার রান্না করতে আগে চাল ডাল ভিজিয়ে রাখলে ভালো হয়। সাথে ছোলা থাকছেই। সেহরি শেষে ছোলা ভিজিয়ে রাখা ভালো, সিদ্ধ করার ঝামেলা থাকে না। অনেকে পিঁয়াজু, বেগুনী এসব তৈরি করেন। এসব মুখরোচক বটে কিন্তু তেলেভাজা হিসেবে স্বাস্থ্যের জন্য মাননসই নয়। এবার রামাদান এল বৈশাখে। গ্রীষ্মের তাপদাহে দিনের বেলা রোযাদারের বেশি তৃষ্ণা পাবে। ইফতারে তরমুজ বা লেবুর শরবত বানানো যেতে পারে। বছরে রামাদান আসে মাত্র একবার। কাজকর্মের চাপ বেড়ে গেলেও ঈদের পর মনে হবে, আহা রামাদানটা চলে গেল! তাই একটি দিনও অবহেলায় কাটানো যাবে না। মানুষের জীবনে হাতেগোনা কয়েকটি রামাদান আসে মাত্র।

লেখক: শিক্ষার্থী, জকিগঞ্জ ফাজিল সিনিয়র মাদরাসা, সিলেট

ফেইসবুকে আমরা...