Logo
রাসূল পাকের শানে শব্দচয়নের আদব
মুহাম্মাদ সায়ীদ
  • ১৩ নভেম্বর, ২০২৫

রাসূলুল্লাহ e আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে সবচেয়ে বেশি সম্মানিত, তিনি আদম সন্তানের সরদার। উম্মতের জ্ঞাতার্থে অহংকারের দায়মুক্তি ঘোষণা পূর্বক রাসূল e এই সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্বের জানান দিতেন। রাসূলে পাক e বলেছেন– أَنَا أَكْرَمُ الْأَوَّلِينَ وَالْآخِرِينَ عَلَى اللَّهِ -আমি আল্লাহ তাআলার নিকট আগের ও পরের সকলের চাইতে অধিক সম্মানিত। (সুনান দারিমী, হাদীস- ৪৮) তিনি বলেছেন–أَنَا أَكْرَمُ وَلَدِ آدَمَ عَلَى رَبِّي -আমি আদম সন্তানের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত। (সুনান তিরমিযী, হাদীস- ৩৬১০), কখনো আবার তিনি বলেছেন– أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ -আদম সন্তানের সর্দার আমি। (সুনান আবূ দাঊদ, হাদীস- ৪৬৭০)
রাসূলুল্লাহ e এর সম্মান, শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশিষ্টতা আল্লাহ তাআলা কর্তৃক প্রদত্ত। এই সম্মান ও শ্রেষ্ঠত্ব যাতে রাসূলের সাথে মুমিনদের আচরণে উদযাপিত হয়, সেজন্য আল্লাহ তাআলা কুরআন শরীফে রাসূলের ক্ষেত্রে আচরণীয় আদব শিক্ষা দিয়েছেন বহুবার ও বহুভাবে। আল্লাহ তাআলা একে অন্যকে সম্বোধনের মত করে রাসূল e কে সম্বোধন করতে নিষেধ করেছেন, সাধারণভাবে একে অন্যের সাথে যেভাবে কথাবার্তা চলে সেভাবে রাসূলের দরবারে উচ্চ আওয়াজে কথা বলতে বারণ করেছেন এবং রাসূলের শানে বেমানান শব্দচয়ন নিষেধ করেছেন।
আল্লাহর পক্ষ থেকে আদিষ্ট হয়ে সাহাবায়ে কিরাম রাসূল e কে সম্মান দানের ব্যাপারে সর্বাত্মক যত্নশীল থেকেছেন। নবীজির সম্মানার্থে তাঁর ক্ষেত্রে মার্জিত ভাষাপ্রয়োগ ও যথাযথ শব্দচয়নেও তাঁরা ছিলেন নিষ্ঠাবান। তাঁরা তাঁদের চর্চা ও যাপনে রাসূলে পাকের প্রতি সম্মানবোধ মূর্ত করে তুলতে রাসূলের শানে সর্বদা পরিশীলিত ভাষা প্রয়োগ করেছেন। এমনকি নিজেদের মুখের ভাষাকে পর্যন্ত তাঁরা রাসূলের সম্মানোপযোগী করে নির্মাণ করতেন– হাদীস সাহিত্যে এমন দৃষ্টান্তও প্রচুর। একটি রেওয়ায়াত দেখা যাক। বদরের যুদ্ধে রাসূল e এর চাচা হযরত আব্বাস (রা.) বন্দি হওয়ার পরের ঘটনা সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
أَنَّ رِجَالاً مِنْ الأَنْصَارِ اسْتَأْذَنُوا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالُوا ائْذَنْ لَنَا فَلْنَتْرُكْ لِابْنِ أُخْتِنَا عَبَّاسٍ فِدَاءَهُ فَقَالَ لاَ تَدَعُونَ مِنْهُ دِرْهَمًا.
-মদীনার কিছু আনসার সাহাবী রাসূলুল্লাহ e এর কাছে অনুমতি প্রার্থনা করে বললেন, আপনি অনুমতি দিলে আমরা আমাদের বোনের ছেলে আব্বাসের মুক্তিপণ নেয়া বাদ দিব। কিন্তু তিনি বললেন, তোমরা তার (মুক্তিপণের) একটি দিরহামও ছাড়বে না। (বুখারী, হাদীস-২৫৩৭)
হযরত আব্বাস (রা.) নবীজির চাচা। কিন্তু আনসার সাহাবীরা এখানে عمك তথা ‘আপনার চাচা’ না বলে ابن أختنا তথা ‘আমাদের ভাগ্না’ বলেছেন। অথচ আব্বাস (রা.) আনসারদের সরাসরি ভাগ্না ছিলেন না, বরং আব্বাস (রা.) এর পিতা আব্দুল মুত্তালিব ছিলেন আনসারদের বোনের সন্তান। অর্থাৎ দূরসম্পর্কের দিক থেকে আব্বাস (রা.) আনসারদের ভাগ্নেবর্গীয় আত্মীয়। একজন যুদ্ধবন্দিকে নবীজির আত্মীয় হিসেবে উল্লেখ করা তাঁদের কাছে নবীজির শানের জন্য মানানসই মনে হয়নি। তাই তাঁরা আব্বাস (রা.) এর সাথে তাদের নিজেদের দূরবর্তী সম্বন্ধের অভিধা যুক্ত করেছেন। এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ফাতহুল বারীতে ইবনুল জাওযীর মত উদ্ধৃত হয়েছে, এখানে রাসূলুল্লাহ e এর ব্যাপারে সাহাবীদের আদব চর্চার আরেকটি দিক শনাক্ত করে ইবনুল জাওযী বলেছেন–
وإنما قالوا ابن أختنا لتكون المنة عليهم في إطلاقه بخلافه ما لو قالوا : عمك لكانت المنة عليه صلى الله عليه وسلم، وهذا من قوة الذكاء وحسن الأدب في الخطاب.
-আনসার সাহাবীরা ‘আমাদের ভাগ্না’ (ابن أختنا) বলে তাঁদের অনুগ্রহ নিজেদের আত্মীয়র উপর প্রযুক্ত করেছেন। এটা না বলে তারা যদি বলতেন ‘আপনার চাচা’ (عمك), তাহলে এতে নবীজির প্রতি তাঁদের অনুগ্রহ প্রযুক্ত হতো। এই বিষয়টি তাদের তীক্ষ্ণ বুদ্ধিমত্তা ও কথাবার্তার ক্ষেত্রে চমৎকার আদব চর্চার বহিঃপ্রকাশ। (ফাতহুল বারী, ৫/১৯৯)
সাহাবায়ে কিরাম রাসূল e এর জন্য সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে আতিশয্য বা মুবালাগাহ করেছেন। তারা যা করেছেন, সেটি অবশ্যই মিথ্যা প্রশংসার (المدح الباطل) মাধ্যমে বাড়াবাড়ি নয়। রাসূল e তাঁর ক্ষেত্রে মিথ্যা প্রশংসায় বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করে বলেছেন– তোমরা আমার বিষয়ে বাড়াবাড়ি করো না, যেমনটি খ্রিষ্টানরা ঈসা ইবন মারইয়াম সম্পর্কে বাড়াবাড়ি করেছে। আমি তো কেবল আল্লাহর বান্দা। তাই তোমরা বল, আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল (বুখারী, হাদীস- ৩৪৪৫)। তবে কোনরূপ অসততা, কৃত্রিমতা ও মিথ্যার আশ্রয় ছাড়া রাসূলে পাকের উচ্চ শান ও মর্যাদার প্রতি সশ্রদ্ধদৃষ্টি রেখে তাঁকে সম্মান দেওয়ার ক্ষেত্রে বাড়তি যত্নশীল হওয়া উম্মতের পক্ষ থেকে রাসূলের প্রতি মুহাব্বাতেরই বহিঃপ্রকাশ। ইমাম তাজুদ্দীন সুবুকী বলেছেন-
….وتعزيره بالمبالغة في تعظيمه ونصرته وإعانته، وعادة الصحابة في ذلك المبالغة، ولو استقصينا ما ورد عنهم في ذلك لطال، وهم وإن بالغوا في ذلك فلم يبلغوا ما هو حقه، وما أحد من. البشر يطبق القيام بحقه على التمام، لكن بحسب طاقته.
-রাসূল e এর ব্যাপারে আবশ্যিক হলো তাঁকে সম্মানপ্রদর্শন ও সাহায্য-সহযোগিতার ক্ষেত্রে মুবালাগা বা আতিশয্য করার মাধ্যমে তাঁকে মর্যাদা দেওয়া। রাসূলকে সম্মান জানানোর বেলায় সাহাবীদের অভ্যাস ছিলো মুবালাগাহ করা। এ বিষয়ে সাহাবীদের আচরণপদ্ধতির খুঁটিনাটি অনুসন্ধান করলে আলোচনা দীর্ঘ হয়ে যাবে। তবে সাহাবীরা রাসূলকে সম্মান জানানোর ক্ষেত্রে যতই মুবালাগাহ বা আতিশয্য করুন না কেন, তবুও তাঁরা তাঁর প্রকৃত হক আদায় করতে পারেননি। মানুষের কারো পক্ষেই এই হক আদায় করা সম্ভব নয়, তবুও সামর্থ্যানুযায়ী যথাসম্ভব চেষ্টা করা উচিত। (আস সাইফুল মাসলুল)
সাহাবীদের পরে উম্মাহর অন্যান্য অনুসরণীয় ইমাম ও সালাফে সালিহীনের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ e এর শানে কথা বলার ক্ষেত্রে পূর্ণ শিষ্টাচার অবলম্বন করার এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। রাসূলের আদব রক্ষায় এই উম্মাহ যে আপোষহীনতার নীতিতে কতটা দৃঢ় থেকেছে, তার কিছু দৃষ্টান্ত দেখা যাক। হযরত উমর ইবন আব্দুল আযীয (র.) এর একটি ঘটনা ইমাম আবূ নুআইম আল ইসফাহানী (র.) বর্ণনা করেছেন–
أَنَّ عمر بن عبد العزيز أُتِيَ بِكَاتِبٍ يَخُطُّ بَيْنَ يَدَيْهِ وَكَانَ مُسْلِمًا، وَكَانَ أَبُوهُ كَافِرًا، فَقَالَ عمر لِلَّذِي جَاءَ بِهِ: لَوْ كُنْتَ جِئْتَ بِهِ مِنْ أَبْنَاءِ الْمُهَاجِرِينَ، فَقَالَ الْكَاتِبُ: مَا ضَرَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كُفْرُ أَبِيهِ، فَقَالَ عمر وَقَدْ جَعَلْتَهُ مَثَلًا؟ لَا تَخُطُّ بَيْنَ يَدَيَّ بِقَلَمٍ أَبَدًا.
-হযরত উমর ইবন আবদুল আযীয (র.) এর সামনে এক অনুলেখককে নিয়ে আসা হলো, যে তার সামনে (রাজদরবারে) লিখবে। ঐ লোক মুসলিম ছিলেন, কিন্তু তার বাবা ছিলেন কাফির। যে ব্যক্তি এই অনুলেখককে নিয়ে এসেছিলেন তাকে উমর ইবন আব্দুল আযীয (র.) বললেন– মুহাজিরদের সন্তানদের মধ্যে থেকে একজন নিয়ে আসতে! তখন ঐ অনুলেখক বলে উঠলেন- রাসূলুল্লাহ e এর বাবার কুফর তো রাসূলের কোনো ক্ষতি করেনি। এ কথা শুনে উমর ইবনে আব্দুল আযীয (রেগে গিয়ে) বললেন, তুমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উদাহরণ বানিয়ে নিয়েছো? তুমি আর কখনো আমার সামনে কলম দিয়ে লিখবে না। (হিলইয়াতুল আউলিয়া ওয়া তবাকাতুল আছফিয়া, ৫/২৮৩)
কেউ কখনো রাসূলে পাকের জন্য অবমাননাকর শব্দ ও বাক্যচয়ন করলে, এ ব্যাপারে উলামায়ে কিরাম অত্যন্ত কঠোর ফতোয়া দিয়েছেন। যেমন, ইমাম কাযী ইয়ায (র.) উল্লেখ করেছেন–
وَأفْتى أَبُو الْحَسَن القابِسيّ فِيمَن قَال فِي النبي صلى الله عليه وسلم الْجَمَّال يَتِيم أَبِي طَالِب بالْقَتْل، وَأفْتى أَبُو مُحَمَّد بن أَبِي زيد بِقَتْل.
-রাসুলে পাক e কে “উটওয়ালা, আবূ তালিবের ইয়াতীম” বলা ব্যক্তির ব্যাপারে আবুল হাসান আল কাবিসী মৃত্যুদণ্ডের ফাতওয়া দিয়েছেন। আবূ মুহাম্মাদ ইবন আবী যাইদও মৃত্যুদণ্ডের ফাতওয়া দিয়েছেন। (আশ শিফা বি তারীফি হুকুকিল মুস্তাফা, ২/২১৭)
ইমাম তাকিউদ্দীন সুবুকী (র.) উল্লেখ করেছেন–
قال القاضي أبو عبد الله ابنُ المُرابط : مَن قال إن النبيَّ ﷺ هُزِمَ يستتاب، فإن تاب وإلا قتل. وقال حبيب بن ربيع القَرَوِيُّ : مذهب مالك وأصحابه أن من قال فيه عليه السلام ما فيه نقص قُتِلَ دون استتابة.
-কাযী ইবনুল মুরাবিত ফতোয়া দিয়েছেন, যে বলবে রাসূল e পরাজিত হয়েছেন, তাকে তওবা করতে বলা হবে। তাওবা না করলে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। আর হাবীব ইবন রাবী বলেন, মালিকী মাযহাবের ফাতওয়া হলো, যে রাসূল e এর ব্যাপারে সমস্যাজনক কোন কথা বলবে, তার কাছ থেকে তাওবা তলব না করে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। (আস সাইফুল মাসলুল, পৃ-৪০৯)
রাসূলুল্লাহ e ছিলেন সম্পূর্ণভাবে খুঁতমুক্ত। তাঁর কিছু বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য ছিলো, যেগুলো নবুওয়াত-রিসালাতের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাবক ছিলো এবং আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত হিকমাতের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলো। রাসূল e এর এসব বৈশিষ্ট্য ও তাঁর জীবনের বিশেষ দিকগুলোর ব্যাপারেও কথাবলার ক্ষেত্রে যথোচিত আদবের অনুশীলনে উলামায়ে কিরামের অত্যন্ত গভীর মনোযোগ ছিলো। ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী রাসূলে পাক e এর কিছু বিশেষ অবস্থা কিংবা বৈশিষ্ট্যাবলি ব্যাপারে বলেন–
إِنَّ الْمُسْتَدِلَّ تَارَةً يَكُونُ فِي مَقَامِ التَّدْرِيسِ وَالْإِفْتَاءِ وَالتَّصْنِيفِ وَتَقْرِيرِ الْعِلْمِ بِحَضْرَةِ أَهْلِهِ، وَهَذَا لَا إِنْكَارَ عَلَيْهِ كَمَا سَيَأْتِي، وَتَارَةً يَكُونُ فِي الْخِصَامِ وَالتَّبَرِّي مِنْ مَعَرَّةٍ أَوْ نَقْصٍ يُنْسَبُ إِلَيْهَا هُوَ أَوْ غَيْرُهُ، وَهَذَا مَحَلُّ الْإِنْكَارِ وَالتَّأْدِيبِ لَا سِيَّمَا إِذَا كَانَ بِحَضْرَةِ الْعَوَامَ وَفِي الْأَسْوَاقِ، وَفِي التَّعَارُضِ بِالسَّبِّ وَالْقَذْفِ وَنَحْوِ ذَلِكَ.
এগুলো দিয়ে যিনি ইস্তিদলাল করবেন, তিনি হয়তো তা করবেন পঠন-পাঠন, ফাতওয়া, লেখালেখি-গবেষণার ক্ষেত্রে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে উপযুক্ত ব্যক্তিদের সামনে। এটি দোষের নয়। আবার কখনো হয়ত তিনি ইস্তিদলাল করবেন তর্ক-বিবাদ, দোষ থেকে দায়মুক্তি অথবা তার বা অন্য কারো দোষ-ত্রুটির ব্যাপারে। এটা নিন্দনীয় ও তিরস্কারযোগ্য। বিশেষত এটা যদি হয় সাধারণ মানুষের সামনে, বাজারে কিংবা গালাগাল বা বাদানুবাদের মুখে। (আল হাবী লিল ফাতাওয়া, ১/২৭৬)
রাসূলে পাকের আলোচনা করার ক্ষেত্রে উদাসীনতা দেখানো কিংবা মামুলি বিষয়ের মত অনুরাগবিহীন কথা বলা অনুচিত। রাসূলুল্লাহ e এর আলোচনাকালে উম্মাহর সালাফরা পূর্ণ গাম্ভীর্য অবলম্বন করতেন। ইমাম কাযী ইয়ায (র.) বলেছেন– وقد كَان السَّلَف تَظْهَر عَلَيْهِم حَالَات شَديدَة عِنْد مُجَرَّد ذِكْرِه -রাসূলুল্লাহ e এর আলোচনাকালে সালাফ তথা পূর্ববর্তীদের মধ্যে বিশেষ অবস্থা পরিলক্ষিত হতো। (আশ শিফা বিতারীফি হুকুকিল মুস্তাফা, ২/২৫৪)
রাসূল e এর ক্ষেত্রে অনুসরণীয় আদবগুলো আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে শিক্ষা দিয়েছেন এবং এর ব্যত্যয় ঘটলে ব্যক্তির অজান্তেই তার আমল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা বলেছেন। আল্লাহ বলেছেন- হে ঈমানদারগণ, তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তাঁর সাথে সেরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না। এ আশঙ্কায় যে তোমাদের সকল আমল-নিষ্ফল হয়ে যাবে অথচ তোমরা উপলব্ধিও করতে পারবে না। (সূরা হুজুরাত, আয়াত-২) আবার, কোন ব্যক্তি একটি মাত্র ভুল শব্দ বা বাক্য বলার পরিণামে জাহান্নামের গভীর তলদেশে নিক্ষিপ্ত হবে বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছেন রাসূল e। হাদীসে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِنَّ الْعَبْدَ لَيَتَكَلَّمُ بِالْكَلِمَةِ مَا يَتَبَيَّنُ فِيهَا يَزِلُّ بِهَا فِي النَّارِ أَبْعَدَ مِمَّا بَيْنَ الْمَشْرِقِ.
-আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ e কে বলতে শুনেছেন যে, নিশ্চয়ই বান্দা চিন্তাভাবনা ছাড়াই এমন শব্দ উচ্চারণ করে ফেলে যার কারণে সে জাহান্নামের এমন গভীরে প্রবেশ করবে যার দূরত্ব পূর্ব (পশ্চিম) এর দূরত্বের চেয়েও বেশি। (সহীহ বুখারী, হাদীস-৬৪৭৭)
এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ফাতহুল বারীতে উদ্ধৃত ইমাম কাযী ইয়াযের বক্তব্যে আমল ধ্বংসকারী সম্ভাব্য শব্দ বা শব্দসমষ্টির মধ্যে নবুওয়তের হকের ক্ষেত্রে অবমাননাকর শব্দও রয়েছে। (ফাতহুল বারী, ১১/৩১৬)
অতএব, রাসূলুল্লাহ e এর শানে শব্দচয়ন ও তাঁর ব্যাপারে কথা বলার ক্ষেত্রে আদবের ব্যাপারে উদাসীন থাকার সুযোগ নেই। রাসূলে পাকের আদব লঙ্ঘনে ব্যক্তির জীবনের সব আমল ধ্বংস ও পরকালে জাহান্নাম নির্ধারিত হতে পারে।

ফেইসবুকে আমরা...