Logo
দোহায় পর্বতের মূষিক প্রসব এবং বিস্মৃতপ্রায় গাযাবাসী
মুহাম্মাদ বিন নূর
  • ১৪ অক্টোবর, ২০২৫

গাযায় দখলদার ইসরায়েলের এক তরফা নৃশংসতা অব্যাহত আছে, তা নিয়ে কূটনৈতিক মহলে টুকটাক কথা-বার্তাও চলে বটে, আরব ও মুসলিম রাষ্ট্রসমূহ জাতিসংঘসহ সর্বত্র মুখ রক্ষার্থে আর দশটা বিষয়ে আলোচনার ফাঁকে এক সুযোগ পেলে ফিলিস্তিন নিয়ে দু-চারটি আবেগি বাক্য উচ্চারণ করতে ভুলেন না, গাজা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের কার্যকর উদ্যোগ বলতে গেলে অনেকটা এই পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। এর মধ্যে বহুবার ইসরায়েলের চাহিদা মাফিক যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবনা যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রস্তুত করে কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় হামাসের দফতরে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু যখনই হামাস সে সকল প্রস্তাবনার বহু বেইনসাফী সত্ত্বেও গাযাবাসীর স্বার্থে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে, প্রায় ব্যতিক্রমহীনভাবে তখনই দখলদার গোষ্ঠী সেই প্রস্তাবনা থেকে সরে এসে আবার নতুন টালবাহানা শুরু করেছে। এইসব নাটকীয়তা এখন এতোটাই স্বাভাবিক রূপ লাভ করেছে যে এগুলো নিয়ে আর বিস্তারিত লেখার জরুরতটুকু আছে বলে মনে হয় না।

তবে দখলদার রাষ্ট্রটি যুদ্ধবিরতির আলোচনা আটকাতে সর্বশেষ যে কাজটি করেছে, তা শুধু এই সময়েই নয়, হাজার বছরের ইতিহাসেও সম্ভবত বিশেষভাবে স্মর্তব্য, উল্লেখ্য। ঘটনাটি এতদিনে সকল পাঠকেরই জানা, তাও সংক্ষেপে উল্লেখ করছি। যুক্তরাষ্ট্রের অনুরোধে কাতার হামাসের সাথে সংলাপে মধ্যস্থতা করে এবং সেই প্রচেষ্টায় হামাসের বিপরীতে ইসরায়েলও একটি পক্ষ। আনুষ্ঠানিকভাবে যদিও হামাস কাতারের সাথে এবং ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখে, কিন্তু অনানুষ্ঠানিকভাবে দোহায় এইসব সংলাপে অংশগ্রহণের জন্যে মোসাদ তথা ইসরায়েলের বিভিন্ন পর্যায়ের দায়িত্বশীলদের আসা-যাওয়া কারোরই অজানা নয়। এই প্রেক্ষাপটে, হামাস নেতারা দোহায় বসে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবনা সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, ঠিক তখন ইসরায়েল কাতারের মাটিতে সংলাপরত হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। কথিত সভ্য ও আধুনিক পৃথিবীতেই নয় শুধু, বরং হাজার হাজার বছর ধরে মানব সমাজে প্রচলিত রীতি-নীতি অনুসারে সংলাপরত প্রতিপক্ষ  কিংবা মধ্যস্থ কূটনীতিকদের উপর হামলা করা অমার্জনীয় অপরাধ, ইসরায়েল অবলীলায় সে অপরাধ করে বসে।

এই মহা অপরাধ সম্পাদন  করেও ইসরায়েল মোটামুটি ‍নিশ্চিন্তই ছিল বলা চলে। দুনিয়ার তাবৎ দেশ কাতারের প্রতি সহমর্মিতা এবং ইসরায়েলের প্রতি নিন্দা জ্ঞাপন করলেও ‍যুক্তরাষ্ট্র তা করেনি। ট্রাম্প প্রশাসন কাতারের প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করলেও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দা তো জানায় ই নি, উপরন্তু হামাস নেতাদের উপর (যারা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবনার বিষয়েই সংলাপ করছিলেন) হামলার যৌক্তিকতাই বয়ান করেছে প্রকারান্তরে।

এই ঘটনায় কাতারের প্রতিক্রিয়াকে পর্বতের মূষিক প্রসবের সাথে তুলনা করলে অত্যুক্তি হবে না। কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বারবার বলা হলো— এবার আর শুধু কথার মধ্যে থেমে থাকা যাবে না, আমরা কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করবো। অথচ বাস্তবে দোহা থেকে যে সকল উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল, সেগুলো কেবল কঠোর বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কাতার সংশ্লিষ্ট সকল আন্তর্জাতিক সংস্থা/প্রতিষ্ঠানে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নালিশ দিয়েছে, তাতে সেসকল সংস্থা থেকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে নিন্দা জানানো ছাড়া আর কী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে, তা কেউই জানে না। দোহায় ইসরায়েলী হামলার পরের সপ্তাহে কাতার আরব-ইসলামী জরুরি শীর্ষ সম্মেলনের আয়োজন করে, সেখানেও “শুধু কথা নয়. এবার কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে” বলে শেষ অবধি কঠোর বিবৃতির মাধ্যমেই সম্মেলন সমাপ্ত হয়। বিভিন্ন সূত্রের খবর, সে সম্মেলনে মিসরসহ কোন কোন দেশ ইসলামী সামরিক ঐক্যের প্রস্তাব তুললেও প্রধানত সাউদী আরবের বিরোধিতায় শেষ পর্যন্ত তেমন কিছু আর ঘটেনি। অবশ্য মিসরও যে গাযাবাসী বা কাতারের স্বার্থে এমন প্রস্তাব করেছে, তেমনটা মনে করার কোন কারণ নেই। প্রেসিডেন্ট সিসি তো স্পষ্টই বলেছেন, জোর করে গাযায় ত্রাণ পৌঁছানোর চেষ্টা করে মিসরবাসীকে ঝুঁকিতে ফেলতে তিনি পারবেন না। মূলত কাতারের উপর ইসরায়েলের নযীরবিহীন হামলার ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশের মধ্যে এক ধরনের নিরাপত্তাহীনতার বোধ জাগ্রত হয়েছে, সেই বোধ থেকেই মিসরের এমন প্রস্তাব ছিল বলে মনে হয়।

আরব দেশগুলো নিরাপত্তার ক্ষেত্রে শতভাগ মার্কিন নির্ভর, তাদের প্রতিরক্ষা সদরদপ্তর চলে যুক্তরাষ্ট্রের পরামর্শে এবং নিয়ন্ত্রণে, সেই জায়গা থেকে তারা এক ধরনের মোহের মধ্যে ছিল যে, তাদের উপর কেবল ইরান বা ইরানের মিত্র তথা মার্কিন বিরোধী দেশসমূহই হামলা করতে পারে, কিংবা তাদের নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাঁধতে পারে বড়জোর, কিন্তু মার্কিনিদের সাথে মিত্রতা সত্ত্বেও মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন অবৈধ সন্তান ইসরায়েলের দিক থেকেও যে কোন আক্রমণ হতে পারে, তা তাদের হিসাবে ছিল না। যদিও সামান্য কাণ্ডজ্ঞান থাকলে এ কথা বুঝতে অসুবিধার কোনো কারণ নেই যে ইসরায়েলের লক্ষ্য শুধু ফিলিস্তিনী নয়, বরং অধিকাংশ আরব দেশও তাদের লক্ষ্যবস্তু, তবু উট পাখির মতো মরুর বালুতে মুখ গুজে আরবরা নিজেদেরকে ইসরায়েলের হাত থেকে নিরাপদ ভাবতো। কাতারে ইসরায়েলী হামলা সে নিরাপত্তার মোহ ভেঙে দিয়েছে বলা চলে। কাতার, যেখানে কিনা মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় মার্কিন ঘাঁটি তথা মার্কিন সেন্টকমের সদরদপ্তর, সেখানে ইসরায়েল হামলা চালালো, অথচ যুক্তরাষ্ট্র কাতারের প্রতিরক্ষায় কোন ব্যবস্থাই নিলো না, আরবেদের জন্য এটি বড়সড় ধাক্কা, তারা হয়তো এতো তাড়াতাড়ি এই বাস্তবতার মুখোমুখি হবে বলে আশা করেনি। কোন সামরিক বিশেষজ্ঞই এ কথা বিশ্বাস করেননি যে, যুক্তরাষ্ট্র কাতারের উপর ইসরায়েলী হামলার খবর জানতো না। কারণ, ইসরায়েল যদি এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকে এ খবর স্বেচ্ছায় নাও জানিয়ে থাকে, মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে মার্কিন বিমানঘাঁটিসমূহের উপস্থিতির ফলে ইসরায়েলী যুদ্ধবিমান কাতারে পৌঁছার আগেই মার্কিন সেন্টকম সে খবর অবশ্যই জেনেছে। কিন্তু ন্যাটো বহির্ভূত ঘনিষ্ট মিত্র কাতারকে তারা এ খবর জানিয়েছে বিমান হামলা শুরুর দশ মিনিট পর, ততক্ষণে আসলে দোহার প্রতিটি অধিবাসীই হামলার বিষয়টি টের পেয়ে গেছেন।

সে যাই হোক, কূটনৈতিক বাগাড়ম্বরের বাইরে এই ঘটনার পর বাস্তব যে সকল উদ্যোগ সামনে এসেছে, তার মধ্যে একটি হলো এর পরপর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে ইসরায়েল ও তারপর দোহা সফর করেছেন, সফরকালে তিনি জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র কাতারের সাথে আরো জোরদার নিরাপত্তা চুক্তি খুব শিগগিরই করতে যাচ্ছে। সম্ভবত কাতার-সৌদিসহ উপসাগরীয় দেশগুলো ন্যাটোর অনুকরণে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যে চুক্তি করতে চাচ্ছিলো, এবার কাতার তাদের সে কাঙ্ক্ষিত চুক্তিটি পেতে যাচ্ছে। সৌদির কপালে অবশ্য সে চুক্তি আপাতত জুটছে না, তাই তারা বিকল্প হিসেবে পাকিস্তানের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। পাক-সৌদি চুক্তি নিঃসন্দেহে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, কারণ সৌদিসহ উপসাগরীয় দেশগুলো এক তরফা যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল হওয়াতে ইসরায়েল বা যুক্তরাষ্ট্রের কোন মিত্রের বিরুদ্ধেই আসলে তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা মোটেও কার্যকর নয়। এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যেহেতু এক তরফা কোন দেশের প্রতিরক্ষা খাতের উপর নির্ভরশীল নয়, নিজস্ব সক্ষমতার পাশাপাশি চীনসহ মার্কিন বলয়ের বাইরেও তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিস্তার রয়েছে, তার উপর আবার পাকিস্তান মুসলিম বিশ্বের একমাত্র পারমাণবিক রাষ্ট্র, এবং এ চুক্তিতে সৌদির নিরাপত্তার স্বার্থে পাকিস্তানের পারমাণবিক সক্ষমতা ব্যবহারের অঙ্গীকারও অন্তর্ভূক্ত, তাই সৌদির জন্য এটি বেশ ভালো চুক্তিই বটে। আবার পাকিস্তানের জন্যও ভারতের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে সৌদির সাথে এমন চুক্তি বেশ ফলপ্রসূ, কারণ সৌদি আরব থেকে রেমিট্যান্স প্রবাহ স্বাভাবিক রাখা ভারতের অর্থনীতিতে প্রায় বিকল্পহীন জরুরি বিষয়, তাই এই চুক্তির পর পাকিস্তানের উপর হামলা করে সৌদির সাথে যুদ্ধ ঘোষণা ভারতের জন্য খুব একটা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না বলেই অনুমেয়।

উপরে বর্ণিত প্রতিটি ঘটনার প্রেক্ষাপট গাযা তথা ফিলিস্তিনের সাথে গভীরভাবে সম্পৃক্ত, কিন্তু ফিলিস্তিনীদের জন্য তাতে কি কোন সুখবর আছে? ইসরায়েল কর্তৃক আক্রান্ত হয়ে কাতার বলেছিল ইসরায়েলের তরফ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করা না হলে তারা হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির মধ্যস্থতায় ফিরবে না, শুরুর দিকে ইসরায়েলী শাসকগোষ্ঠী গোয়ার্তুমি করলেও শেষ অবধি সেপ্টেম্বরের ২৯ তারিখে হোয়াইট হাউজে বসে ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় ইসরায়েলী প্রধানমন্ত্রী কাতারি প্রধানমন্ত্রীর নিকট দুঃখপ্রকাশ করেছেন বলে জানা যায়। প্রায় একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে গাযায় ‘শান্তি প্রতিষ্ঠার’ এক নতুন প্রস্তাবনা সামনে এসেছে। তাতে গাযাকে নিরস্ত্র করে সেখানে ‘আন্তর্জাতিক প্রশাসক’ নিয়োগের প্রস্তাবনা আছে, হামাসকে গাযা তথা ফিলিস্তিন থেকে বহিষ্কারসহ আরো অনেক কিছুই আছে। ইরাক যুদ্ধের অন্যতম খলনায়ক টনি ব্লেয়ারকে সেই আন্তর্জাতিক সরকারের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হতে পারে বলেও খবরে দেখা যাচ্ছে। কার্যতঃ এ প্রস্তাবের ভাগ্যে কী আছে তা খুব শিগগিরই স্পষ্ট হয়ে উঠবে, কিন্তু তাতে যে ফিলিস্তিনীদের স্বাধীনতার স্বপ্নকে আবারও দাফন করে ফেলা হবে, তা বলাই বাহুল্য। গাযাবাসীর নযীরবিহীন কুরবানী যেন আবারো বিস্মৃতপ্রায় হতে যাচ্ছে, যদিও শেষ অবধি এই প্রস্তাব কতটুকু বাস্তবায়িত হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহের অবকাশ রয়েছে। গাযার ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়াতে হামাসের কোন আপত্তি কখনোই ছিলো না, এখনো থাকবে না, হয়তো বড়জোর টনি ব্লেয়ারের জায়গায় আরবদেরকে পেতে চাইবে তারা, এসবই আলোচনাসাপেক্ষে সমাধানযোগ্য। কিন্তু একথা স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, গাযার বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি আর কাতার-সৌদি-মিসর তথা আরবদের চাপে যদি হামাস ট্রাম্পের এই প্রস্তাব মেনে নিতে বাধ্য হয়– এবং সে অনুযায়ী সশস্ত্র প্রতিরোধ ত্যাগ করে, তবে সেটা হবে হামাসের জন্যে সত্যিকারের পরাজয়। হয়তো আরব-মুসলিমদের সহযোগিতার অভাবে তাদের এই পরাজয় মেনে নিতে হতেও পারে, কিন্তু তাতে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের চিরসমাপ্তি ঘটবে না। এর আগে ফাতাহ/পিএলও যখন অস্ত্র সমর্পণ করেছিল, তখন উত্থান ঘটেছিল এই হামাসের, খোদা না করুন, এখন যদি হামাসকে অস্ত্র সমর্পণ করতে হয়, তবে ভবিষ্যতে আবারও অন্য কোন নামে এই ন্যায্য আন্দোলন এগিয়ে যাবে। এখনই আশঙ্কার মতো পরিস্থিতি পুরোপুরি তৈরি হয়নি, তবু সে আশঙ্কা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই।

গাযাবাসীর অবস্থা এতোটাই দুঃসহ হয়ে উঠেছে, যে এখন আর লিখে কিংবা বলে সে অবস্থা ব্যাখ্যা করা অসম্ভব। আমি সে ব্যর্থচেষ্টা করবও না। তবে এই পরিস্থিতিতেও আরব কিংবা মুসলিমদের তরফে তাদের পক্ষে সত্যিকারের কোন পদক্ষেপ নেওয়া যে হচ্ছে না, তা বলা বাহুল্য। তারপরও গাযাবাসীদের পক্ষে বেশ কিছু প্রতীকী সুখবর গণমাধ্যমে দেখা যাচ্ছে বটে। যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপের অনেকগুলো দেশ জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি জানিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র আর তার তল্পিবাহক হাতে গোনা কয়েকটি দেশ ছাড়া জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বেশিরভাগ রাষ্ট্রই ফিলিস্তিনীদের অধিকারের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। যদিও বাস্তব দুনিয়ায় এসবের খুব একটা মূল্য নেই, তবু ইসরায়েলের পিছন থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন সরে যাওয়াটা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

এই নিবন্ধ শেষ করার আগে একদল সত্যিকারের মানুষের কথা উল্লেখ করতে চাই। গাযায় ইসরায়েলের অবরোধ ভাঙতে পার্শ্ববর্তী আরব রাষ্ট্রগুলোর যেখানে বিবৃতি ছাড়া আর কোন কার্যকর ভূমিকাই নেই, সেই পরিস্থিতিতে বহুবারের ব্যর্থতার পর আবারও একদল মানবাধিকার কর্মী সমুদ্রপথে গাযায় পৌঁছানোর জন্য রওনা দিয়েছেন তাদের বেসামরিক নৌবহর– গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা নিয়ে। অর্ধশত নৌযানের এই বহরে রয়েছেন প্রায় ৪৪টি দেশের নাগরিক, যা কিনা পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের সর্ববৃহৎ নৌবহর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। এর আগে তারা ইসরায়েল কর্তৃক বিভিন্ন উপায়ে বাধার শিকার হয়েছেন, এইবারের বহরেও ইসরায়েল হামলা চালিয়েছিল, আবার সমঝোতা করে এ বহরকে গাযায় না পৌঁছে ফিরে যেতে রাযি করাতেও চেয়েছিল, কিন্তু এই নিবন্ধ লেখা অবধি গাযার পথে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলা তাদের যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। স্পেন ও ইতালির নৌবাহিনী এই বহরকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও বলেছে, যদিও ইতালি আবার মধ্য পথ থেকে বহরটি ফিরিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা করেছে। নিবন্ধ লেখার মুহূর্তে সুমুদ ফ্লোটিলা সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় অবস্থান করছে, তারা গাযায় পৌঁছাতে পারলে এক নতুন ইতিহাসের জন্ম দিবে, গাযার উপর আরোপিত সুদীর্ঘ অবরোধ প্রতীকীভাবে ভেঙে দিতে পারবে, আর ইসরায়েল কর্তৃক আক্রান্ত হলে সেটি হবে ৪৪টি রাষ্ট্রের উপর ইসরায়েলের আক্রমণ, যদিও তন্মধ্যে বেশিরভাগ রাষ্ট্রই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গিয়ে তাদের নাগরিকদের সুরক্ষা দিবে কিনা তা যথেষ্ট প্রশ্ন সাপেক্ষ। গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার জন্য শুভকামনা। তাদের এই মহান মানবিক মিশন সফল হবেই, এইবার না হলে পরে কোন বার, কিন্তু ব্যর্থ হবে না ইন শা আল্লাহ। গাযায় চলমান গণহত্যায় গোটা মানবজাতির লজ্জাজনক নিষ্ক্রিয় অবস্থানের বিপরীতে এই নৌবহরটি  সেইসকল ব্যতিক্রমী মানুষদের প্রতিনিধিত্ব করে, মানব ইতিহাসে যাদের অবস্থান হবে অনন্য উচ্চতায়। পুরো মানব সভ্যতার নির্লজ্জতার বিপরীতে ইতিহাসের পাতায় তারাই এই সময়ের মানবজাতির গৌরবজনক প্রতিনিধিত্ব করবেন।

ফেইসবুকে আমরা...