1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
মীলাদুন্নবী সা. : আপত্তি ও জবাব
আবু লাফীফ মুহা. আব্দুল লতিফ
  • ২৮ আগস্ট, ২০২৫

মহানবী সা. এর পবিত্র জন্ম তথা মীলাদকে কেন্দ্র করে মুসলমানরা খাসভাবে রবীউল আউয়াল মাসে এবং আমভাবে সারা বছর দুরূদ শরীফ ও জন্মবৃত্তান্ত বর্ণনার মাহফিল করে থাকেন। এ মাহফিলকে মীলাদ মাহফিল বলা হয়ে থাকে। যুগে যুগে হক্কানী-রব্বানী উলামায়ে কিরাম এ অনুষ্ঠানকে সমর্থন করেছেন এবং উদযাপনও করেছেন। ইদানিং একটি মহল থেকে মীলাদ-মাহফিলের এ অনুষ্ঠানের বৈধতা নিয়ে আপত্তি তোলা হচ্ছে। বক্ষমান নিবন্ধে আমরা সে আপত্তিগুলোর দলীলভিত্তিক জবাব দেওয়ার প্রয়াস পাবো, ইনশাআল্লাহ।
আপত্তি-০১
মীলাদ বা জন্মদিন পালন করা বিজাতীয় সংস্কৃতি।
জবাব
জন্মদিন পালন করা বিজাতীয় সংস্কৃতি কথাটি সঠিক নয়; বরং বিজাতির নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে তা পালন করা বিজাতীয় সংস্কৃতি। কেননা, বিধর্মীরা কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম-কানূন মেনে জন্মদিন পালন করে থাকে। তাই উক্ত নিয়ম-কানূনের অনুসরণ করা নিষিদ্ধ হবে। কারণ, হাদীসে বলা হয়েছে,

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

-যে ব্যক্তি যার সাথে সাদৃশ্য রাখবে, তার সাথে তার হাশর হবে। (আবূ দাঊদ, হাদীস-৪০৩৩) উক্ত নিয়ম-নীতির অনুসরণ না করলে শুধু জন্মদিন উদযাপন করা হারাম হবে না। কারণ, মহানবী সা. নিজেই নিজের জন্মদিন উদযাপন করেছেন রোযা রাখার মাধ্যমে। যেমন সহীহ মুসলিম শরীফে এসেছে-

سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الاِثْنَيْنِ فَقَالَ : فِيهِ وُلِدْتُ وَفِيهِ أُنْزِلَ عَلَىَّ

-রাসূল সা. কে সোমবারে রোযা রাখা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, সেদিন আমি জন্মলাভ করেছি এবং সেদিনেই আমার প্রতি (প্রথম) অহী নাযিল হয়। (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৮০৭)
হাদীসটি দ্বারা বুঝা যায়, মহানবী সা. স্বীয় জন্মদিনে শুকরিয়া প্রকাশার্থে রোযা রেখেছিলেন। আর প্রতি সোমবার রোযা রাখা প্রমাণ করে যে, জন্মদিনের জন্য শুকরিয়া প্রকাশার্থে জন্মদিন পালন করা দোষণীয় নয়। এ হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা মুল্লা আলী কারী (র.) বলেন,

وفي الحديث دلالة على أن الزمان قد يتشرف بما يقع فيه

-এ হাদীসে প্রমাণ রয়েছে যে, সময় তার মধ্যে সংঘটিত বিষয় দ্বারা মর্যাদাবান হয়ে থাকে। (মিরকাতুল মাফাতীহ, খ- ৬, পৃ ৩৭২) আর আমরা তো রাসূল সা. এর জন্মদিন পালনের সময় বিজাতীয় আচার অনুষ্ঠান অনুসরণ করি না। তাই এ যুক্তি দিয়ে মীলাদ মাহফিলকে রদ করা যায় না।
আল্লামা জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র.) বলেন,

عندي أن أصل عمل المولد الذي هو اجتماع الناس وقراءة ما تيسر من القرآن ورواية الأخبار الواردة في مبدأ أمر النبي صلى الله عليه وسلّم وما وقع في مولده من الآيات ثم يمد لهم سماط يأكلونه وينصرفون من غير زيادة على ذلك هو من البدع الحسنة التي يثاب عليها صاحبها لما فيه من تعظيم قدر النبي صلى الله عليه وسلّم وإظهار الفرح والاستبشار بمولده الشريف

-আমার মতে, মীলাদ মাহফিলের মূল কাজ হলো কিছু মানুষ একত্রিত হওয়া, কুরআন তিলাওয়াত করা, রাসূল ব এর জন্মকালীন সংঘটিত ঘটনাবলী এবং তাঁর প্রাথমিক জীবন সংক্রান্ত হাদীস আলোচনা করা, অতঃপর খাবার বিতরণ করা ও খাওয়া ইত্যাদি বিদআতে হাসানা, যা করলে ব্যক্তি সাওয়াব পাবে। কারণ, এতে মহানবী সা. এর তাযীম করা হয় এবং তাঁর পবিত্র জন্মে খুশি প্রকাশ করা হয়। (আল হাভী লিল ফাতাওয়া, খ- ১, পৃ ১৮২)

আপত্তি-০২
মীলাদের মাধ্যমে আপনারা কি প্রমাণ করতে চান যে, আপনারা সাহাবায়ে কিরামের চেয়ে নবী বকে বেশি মুহব্বত করেন?
জবাব
সাহাবায়ে কিরামের সাথে উম্মতের অন্য কাউকে তুলনা করাকে আমরা সমীচীন মনে করি না। তবে পরবর্তী কেউ পূর্ববর্তীদের অপেক্ষা সামগ্রিকভাবে না হলেও কোন কোন দিক থেকে নবী সা. কে বেশি মুহব্বত করতে পারে এমন কথা হাদীস শরীফেও উল্লেখ রয়েছে। যেমন, রাসূল সা. বলেন,

إن من أشد أمتي لي حبا ناسا يكونون بعدي يود أحدهم لو رآني بأهله وماله

-আমার পরে আমার উম্মতের মাঝে এমন কিছু মানুষ হবে, যারা আমার প্রতি সর্বাধিক ভালোবাসা স্থাপনকারী বলে বিবেচিত হবে। তাদের কেউ কেউ কামনা করবে যে, যদি সে তার পরিবার-পরিজন এবং সম্পদের বিনিময়েও আমাকে দেখতে পেত!। (সহীহ মুসলিম, হাদীস-২৮৩২)

আপত্তি-০৩
মীলাদ ছাড়া কি নবী সা. এর মুহব্বত প্রকাশ করা যায় না?
জবাব
আমরা এ কথা কখনো বলি না যে, মীলাদ শরীফই রাসূল সা. এর মুহব্বত প্রকাশের একমাত্র মাধ্যম; বরং আমরা বলি, অন্যতম মাধ্যম। কেননা, এর মাধ্যমে দুরূদ ও সালাম পাঠ করা হয়। তাই আমরা কাউকে মীলাদ শরীফ পড়তে বাধ্য করি না। তবে, বিরোধীদেরও উচিত সহনীয় পর্যায়ে কথা বলা।

আপত্তি-০৪
রবীউল আউয়াল মাসকে খাস করার কারণ কী?
জবাব
মহানবী সা. এর জন্মবৃত্তান্ত বিষয়ক অনুষ্ঠান তথা মীলাদ মাহফিল এর জন্য নির্ধারিত কোন সময় নেই; বরং যেকোন সময়ই তা উদযাপন করা যায়। দিনে, সপ্তাহে বা মাসে যতবেশি এ অনুষ্ঠান করা যাবে ততই মঙ্গল। তবে রবীউল আউয়াল মাস মহানবী সা. এর জন্মমাস হওয়ায় বিষয়টি মনের মাঝে উজ্জীবিত হয় বেশি। আর আল্লাহ তাআলা মানুষের মনকে এরকম স্বভাব দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। মানুষ প্রসঙ্গ ভালোবাসে। তাছাড়া কোনো কারণ থাকলে সময়কে খাস করা বৈধ। হযরত ইবন মাসঊদ (রা.) প্রতি বৃহস্পতিবার ওয়ায করতেন। মহানবী সা. প্রতি শনিবার মদীনা থেকে কুবা মসজিদে যেতেন বলে হাদীস শরীফে প্রমাণ রয়েছে। (তাবারানী, কানযুল উম্মাল, হাদীস-৮৩৪, হায়সামী (র.) বলেন, হাদীসটির রাবীগণ সকলে সিকাহ বা নির্ভরযোগ্য।)

আপত্তি-০৫
অনেকে বলে থাকেন, ১২ রবীউল আউয়াল মহানবী সা. এর জন্ম হয়েছে কি না তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে, কিন্তু ১২ রবীউল আউয়াল তাঁর ইন্তিকাল দিবস নিশ্চিত। তাই উক্ত দিন তো দুঃখের দিন। দুঃখের দিনে আনন্দ প্রকাশ করা উপহাসের শামিল। তাই এটি মহানবী সা. এর প্রতি তাযীম প্রদর্শন নয়; বরং তাকে তাওহীন বা অপমান করার শামিল, যা প্রকাশ্য কুফরী।
জবাব
আমরা বলব, রাসূল সা. এর জন্মের বছর যে হাতি সাল তথা আবরাহার হস্তীবাহিনী নিয়ে মক্কা আক্রমণ করার বছর তা নিয়ে কোন মতভেদ নেই। ইবন ইসহাক (র.) বলেন, এটি মাশহুর কথা। ইবন দেহইয়া, ইবনল জাওযী ও ইবনল কায়্যিমসহ অনেকে বলেন, এ ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের মাঝে ইজমা সংঘটিত হয়েছে। হাদীস শরীফে রয়েছে-

عن ابن عباس رضي الله عنهما قال : ولد النبي صلى الله عليه و سلم عام الفيل

-হযরত ইবন আব্বাস (রা.) বলেন, নবী করীম সা. হাতি সালে জন্মগ্রহণ করেছেন। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস-৪১৮০। ইমাম হাকিম (র.) বলেন, হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মুতাবিক সহীহ।)
অনুরূপ, তার জন্মবার যে সোমবার ছিল তা নিয়েও মতভেদ নেই। কেননা, হাদীস শরীফে রয়েছে-

سُئِلَ عَنْ صَوْمِ الاِثْنَيْنِ فَقَالَ : فِيهِ وُلِدْتُ

-রাসূল সা. কে সোমবারে রোযা রাখা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলো। তিনি বললেন, সেদিন আমি জন্মলাভ করেছি। (সহীহ মুসলিম, হাদীস-২৮০৭)
তদ্রুপ হাফিয ইবন কাসীর ও ইবন হাজার (র.) বলেন, অধিকাংশ আলিমের মতে, তাঁর জন্মমাস ছিল রবীউল আউয়াল। সুহাইলী (র.) বলেন, এটিই প্রসিদ্ধ মত। সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ কিতাবে বলা হয়েছে, এ ব্যাপারে কেউ কেউ ইজমা হওয়ার দাবীও করেছেন।
তবে তাঁর জন্মতারিখ নিয়ে অনেকে মতভেদ করে থাকেন। মুস্তাদরাকে হাকিমে মুহাম্মদ ইবন ইসহাক (র.) থেকে বর্ণিত আছে, তাঁর জন্মতারিখ ছিল ১২ রবীউল আউয়াল। গুরার কিতাবে বলা হয়েছে- এর ওপরই আমল চলছে। সিরাতে হালাবিয়া কিতাবে বলা হয়েছে, এটিই মাশহুর বা প্রসিদ্ধ মত। আলী মুহাম্মাদ আস সালাবী তার সীরাতে নববীয়া কিতাবে বলেছেন, এটি অধিকাংশের মত। সীরাতে ইবন হিব্বান কিতাবেও এ মতটিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।
তবে কেউ কেউ বলেন, তাঁর জন্মতারিখ ৮ রবীউল আউয়াল। হাফিয ইবন দেহইয়া এবং ইবন হাজার (র.) এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। আর ইবন হাযম এবং হুমাইদী (র.) এ মতটিকে পছন্দ করেছেন।
তাই, ১২ রবীউল আউয়াল ঈদে মীলাদুন্নবী সা. কে খাস করলে অধিকাংশ আলিমের মতামত বা প্রসিদ্ধ মতানুযায়ী আমল করা হয়। এতে কোন অসুবিধা নেই। আর কোন কারণে দিনক্ষণ নির্ধারণ করার বৈধতা সম্পর্কে পূর্বে বলা হয়েছে।
পক্ষান্তরে, যদিও অনেক আলিমের মত হলো- রাসূল সা. এর ইন্তিকাল ১২ রবীউল আউয়াল হয়েছে কিন্তু যৌক্তিক কারণে উক্ত দিন তাঁর ইন্তিকালের দিন হতে পারে না। তাই উক্ত দিনে দুঃখ ও খুশির সংমিশ্রণ ঘটেনি। কেননা, তার ইন্তিকালের দিন সোমবার হওয়া সুপ্রমাণিত। আর বিদায় হজ্জ তথা ৯ যিলহজ্জ শুক্রবার হওয়াও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। অথচ সেখান থেকে দিন গুণে আসলে ১২ রবীউল আউয়াল কোনক্রমেই সোমবার হয় না। কেননা, যিলহজ্জ, মুহাররাম, সফর এ তিনটি মাসের প্রত্যেকটি যদি ২৯ দিনে ধরা হয় তবে ১২ রবীউল আউয়াল হয় বৃহস্পতিবার, যদি ২মাস ২৯ দিনে এবং ১মাস ৩০দিনে ধরা হয় তবে ১২ রবীউল আউয়াল হয় শুক্রবার আর ২মাস ৩০ দিনে এবং ১ মাস ২৯ দিনে ধরা হলে ১২ রবীউল আউয়াল হয় শনিবার।
আল্লামা সুহাইলী (র.) বলেন, রাসূল সা. এর ইন্তিকাল দিবস ছিল ২ রবীউল আউয়াল। আর সবগুলো মাস ২৯ দিন ধরলে ২ রবীউল আউয়াল সোমবার হয়। হযরত ইবন উমার (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, মহানবী সা. বিদায় হজ্জের পর মাত্র ৮০ দিন জীবিত ছিলেন। আর বিদায় হজ্জ থেকে ৮০ দিন গণনা করলেও সোমবার পড়ে ২ রবীউল আউয়াল।
সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ কিতাবে বলা হয়েছে, এই কওলটি জমহুরের মতের বিপরীত হলেও তা সঠিক ও বিশুদ্ধ।
মুস্তাদরাকে হাকিমে বর্ণিত আছে-

اشتكى في النصف من صفر ثم قبض يوم الإثنين ليومين مضيا من شهر ربيع الأول

-রাসূল সা. সফর মাসের মধ্যবর্তী সময়ে অসুস্থ হলেন, অতঃপর রবীউল আউয়াল মাসের ২ তারিখ সোমবার ইন্তিকাল করেন। (মুস্তাদরাকে হাকিম, খ- ৪, পৃষ্ঠা- ৪০)
তাছাড়া জমহুরের কওল মুতাবিক রাসূল সা. ১২ রবীউল আউয়াল ইন্তিকাল করলেও সেদিন দুঃখ প্রকাশের দিন হিসেবে আর বাকী নেই। কারণ, কারো মৃত্যুতে শোক প্রকাশের জন্য শরীআত তিনদিন সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে। এছাড়া হাদীস শরীফে রাসূল সা. এর ইন্তিকালকেও উম্মতের জন্য কল্যাণকর বলা হয়েছে। যেমন রাসূল সা. বলেন-

حياتي خير لكم تحدثون ويحدث لكم ووفاتي خير لكم تعرض علي أعمالكم فما رأيت من خير حمدت الله عليه وما رأيت من شر استغفرت الله لكم

-আমার জীবন তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তোমরা কথা বল এবং তোমাদের সাথেও কথা বলা হয়। আর আমার ইন্তিকালও তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তোমাদের আমল আমার সামনে পেশ করা হবে। যদি আমি তাতে ভালো কিছু দেখি তবে সেজন্য আমি আল্লাহ তাআলার প্রশংসা করবো। আর খারাপ কোনকিছু দেখলে তোমাদের জন্য আল্লাহ তাআলার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করবো। (মুসনাদে বায্যার, মাজমাউয যাওয়াইদ, হাদীস-১৪২৫০; ইমাম হাইসামী (র.) বলেন, এ হাদীসের রাবীগণ সকলে সহীহ হাদীসের রাবী।)

আপত্তি-০৬
মীলাদ বলতে মহানবী সা. এর জন্মবৃত্তান্ত সংক্রান্ত আলোচনাকে বুঝায়। যেকোনভাবেই তা করা যায়। কিন্তু আপনারা তা নির্ধারিত পদ্ধতিতে পালন করেন কেন?
জবাব
মীলাদ মাহফিল বলতে যদিও শাব্দিক অর্থে শুধু মহানবী সা. এর জন্মবৃত্তান্তমূলক আলোচনাকে বুঝায়, কিন্তু পারিভাষিক অর্থে জন্মবৃত্তান্ত আলোচনার সাথে দুরূদ, সালাম, তিলাওয়াত, কাসীদা পাঠ, দুআ এবং তাবাররুক বিতরণ ইত্যাদির সমষ্টিগত অনুষ্ঠানকে বুঝায়। আর একটি বিষয়কে তার অংশ দ্বারা নামকরণ করা বৈধ। যেমন, সূরা বাকারার সব স্থানে বাকারা বা গরুর আলোচনা নেই। একে বলে তাসমিয়াতুল কুল বিইসমিল জুয। তবে, আমরা উক্ত নির্ধারিত পদ্ধতিতে মীলাদ মাহফিল করাকে জরুরী মনে করি না। তার প্রমাণ হলো- যারা মীলাদ মাহফিল করে থাকেন এলাকাভিত্তিক তাদের অনুষ্ঠানের ভিন্নতা রয়েছে। আমরা মনে করি, মহানবী সা. এর জন্মবৃত্তান্ত তাঁর পবিত্র সীরাতের অংশ। তাই এটি আলোচনা করা অবশ্যই বরকতের কারণ। আর জন্মবৃত্তান্তের সাথে শরীআত সমর্থিত অন্যান্য নেক আমল করলে তাতে বাধা দেওয়া যায় না। কিন্তু সর্বদা মনে রাখতে হবে যে, মীলাদ পালনকারীরা কোন নির্ধারিত পন্থায় মীলাদ অনুষ্ঠান করাকে জরুরী মনে করে না। আর তা উচিতও নয়।

আপত্তি-০৭
মীলাদ নিয়ে সমাজে ফিতনা ছড়াচ্ছে, দলাদলি হচ্ছে। অথচ এর দ্বারা যা উপকার হচ্ছে তারচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে। তাই এটা নাজায়িয।
জবাব
মীলাদের কারণে সমাজে ফিতনা ছড়াচ্ছে এ দাবি সত্য থেকে বহুদূরে অবস্থিত; বরং মীলাদ নিয়ে বাড়াবাড়ি ও ছাড়াছাড়ির কারণে ফিতনা ছড়াচ্ছে। যারা মীলাদের ন্যায় মুস্তাহাব কাজ অন্যের ওপর চাপিয়ে দিতে চায় বা যারা এ বৈধ কাজটি বিনা প্রমাণে ও অযৌক্তিকভাবে বাঁধা দিতে চায় আমরা মনে করি, উভয়দলের কোন দলই ভ্রান্তিমুক্ত নয়। তাই সবাই সচেতন হলে ফিতনা ছড়াবে না; বরং মীলাদ মাহফিলকে দ্বীনী দাওয়াতের একটি উত্তম মাধ্যম হিসেবে কাজে লাগানো যাবে। এতে মীলাদের মাধ্যমে সমাজে শান্তি আসবে; ফিতনা ছড়াবে না।

আপত্তি-০৮
অনেক সময় হারাম কাজ- যেমন সিনেমা হল উদ্বোধনের সময় মীলাদ পড়া হয়।
জবাব
হারাম কাজের উদ্বোধন শুধু মীলাদ দ্বারা কেন কুরআন তিলাওয়াত বা নামায দ্বারা করলেও তা নিষিদ্ধ হবে। এক্ষেত্রে মীলাদ মাহফিলের দোষ কোথায়? এ কারণে মীলাদ মাহফিল নিষিদ্ধ হতে পারে না; বরং হারাম কাজের শুরুতে মীলাদ মাহফিলসহ পবিত্র যেকোন কাজ দ্বারা বরকত নেয়ার চিন্তা করাও পাপ হবে। আমাদের কর্তব্য হলো, যদি কোন মূর্খ এ ধরনের কাজ করে তবে তাকে বাধা দেওয়া।
পরিশেষে আমরা বলতে চাই, এ আপত্তিগুলো মীলাদ বিরোধীদের কোনো কিতাব থেকে সংগৃহীত নয়; বরং তাদের সাথে বাক-বিত-াকালে তাদের থেকে প্রকাশিত আপত্তিগুলোকে এখানে একত্র করে জবাব দেওয়া হয়েছে। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় অনেক দলীল বাদ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সঠিক বুঝ দান করুন। আমীন।

ফেইসবুকে আমরা...