1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
সম্পাদকীয়
রেদওয়ান আহমদ চৌধুরী
  • ৬ এপ্রিল, ২০২৫

অতি অল্প কয়দিনের যুদ্ধ বিরতির পর ফিলিস্তিনে আবারো রক্ত ঝরছে। যুদ্ধ বিরতির চুক্তি ভঙ্গ করে নির্বিকার পৃথিবীর চক্ষুসমক্ষে সুস্থির গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ দখলদার বাহিনী। বর্বরতার চরম পরাকাষ্ঠা প্রদর্শন করে দখলদার জায়োনিস্টরা ফিলিস্তিনের অবুঝ শিশুদের উপর পর্যন্ত নিধনযজ্ঞ অব্যাহত রেখেছে। জায়োনিস্টদের সন্ত্রাসকাণ্ডে ফিলিস্তিনের মানুষ খাদ্যের অভাবে ভুগছে। চরম ক্ষুধা, পানি ও বিদ্যুতের অভাব তৈরি করে ফিলিস্তিনীদের জীবন চরম দুর্বিষহ করে তোলা হচ্ছে। তদুপরি নারী ও শিশুদের নিরাপত্তাহীনতা ফিলিস্তিনীদের প্রতিটি মুহুর্তকে আতংকে নিমজ্জিত করছে। অবৈধ দখলদার বাহিনী এমন ভয়ংকর মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড সংঘটিত করতে কার্যতঃ কোন বিরোধিতার মুখোমুখি তো হচ্ছেই না, উপরন্তু পশ্চিমা বিশ্বের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থনে তারা প্রতিনিয়ত মদদপুষ্ট হচ্ছে। বিশ্বের বর্তমান বাস্তবতা আমাদের সামনে এক কঠিন প্রশ্ন উপস্থাপন করছে—মানবতা কি আসলে নির্দিষ্ট কিছু জাতি, ধর্ম, কিংবা ভূখণ্ডের জন্য একরকম, আর অন্যদের জন্য আরেক রকম? আজকের ভূরাজনীতি, শক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর অবস্থান ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর ভূমিকা বিশ্লেষণ করলে এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, বিশ্বব্যাপী ন্যায়বিচার এবং মানবাধিকারের নামে একধরনের ভণ্ডামির জয়জয়কার চলছে। পশ্চিমা বিশ্ব নিজেদের “সভ্যতা” ও “মানবাধিকারের” ধারক-বাহক হিসেবে দাবি করলেও প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এই মানবাধিকার নীতিগুলো কেবল তাদের স্বার্থ অনুযায়ী প্রয়োগ করা হয়। যেখানে মুসলিম বিশ্ব আক্রান্ত, সেখানে তাদের নিরবতা কিংবা প্রত্যক্ষ সমর্থন লক্ষণীয়। আমরা দেখেছি কিভাবে ফিলিস্তিনে শিশু ও নিরীহ নাগরিকদের রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, কিভাবে সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তান, লিবিয়া—একটির পর একটি মুসলিম ভূখণ্ড ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অথচ জাতিসংঘ এবং তথাকথিত “আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়” কেবল নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। এই পরিস্থিতি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে, বিশ্বশক্তিগুলোর মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের ধারণা আসলে দ্বিমুখী। একদিকে তারা মুসলিম বিশ্বকে “চরমপন্থা” বা “সহিংসতার” জন্য দোষারোপ করে, অন্যদিকে নিজেরাই যুদ্ধের নামে নির্বিচারে মানুষ হত্যা করে, রাষ্ট্র ধ্বংস করে এবং তথাকথিত ‘মানবাধিকার’ কিংবা ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠার নামে আগ্রাসন চালায়।

এই বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে মুসলিম বিশ্বের নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে ভাবার প্রয়োজনীয়তা তীব্রতর হয়েছে। জাতিসংঘ কিংবা পশ্চিমা শক্তির মুখাপেক্ষী হয়ে কোনো সমাধান মিলবে না, বরং প্রয়োজন বৃহত্তর মুসলিম ঐক্য, স্বাধীন নীতিনির্ধারণী শক্তি এবং স্বনির্ভরশীলতা। মুসলিম দেশগুলোর উচিত নিজেদের মধ্যে বিভেদ ভুলে একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক ও কৌশলগত জোট গঠনের মাধ্যমে পশ্চিমা প্রভাব বলয় থেকে স্বাধীন হওয়া। এই লক্ষ্যে ডলার নির্ভরতা কমিয়ে নিজস্ব মুদ্রার মাধ্যমে বাণিজ্য চালু করা, যথাসম্ভব মুসলিম বিশ্বের মধ্যে বিনিয়োগ বৃদ্ধির মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা জোরদার করা, আধুনিক প্রযুক্তি, গবেষণা এবং প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে সক্ষমতা নিশ্চিত করা সহ সাংস্কৃতিক ও ইসলামী আদর্শগত পুনর্জাগরণের মত কর্মকৌশলের প্রতি মনোনিবেশ করা প্রয়োজন। সর্বোপরি, মুসলিম বিশ্বকে পশ্চিমা আধিপত্যের শামিয়ানা থেকে বের হয়ে নিজেদের অভিভাকত্ব নিজেদের মধ্যে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারেই ভাবতে হবে, এছাড়া মুক্তির দিশা পাওয়া অসম্ভব।

ফেইসবুকে আমরা...