1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারত
মোহাম্মদ আশরাফুর রহমান
  • ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৩
পবিত্র হজ্জের মাসসমূহ আসলেই হারামাইন শারিফাইন যিয়ারতে যাবার লক্ষ্যে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত হতে অসংখ্য মুমিন মুসলমান প্রস্তুতি গ্রহণ করেন। মহান রব যাদেরকে নসীব করেন তারা পার্থিব সৌন্দর্য ত্যাগ করে কাফনের ন্যায় সাদাসিদে দু’টুকরো কাপড় শরীরে জড়িয়ে ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’ ধ্বনি তুলে হাজির হন মালিক ও মাওলার দরবারে। হজ্জের কার্যাবলি সম্পন্ন করে কিংবা এর পূর্বে ঈমানের টানে ছুটে চলেন মদীনা তায়্যিবায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারতে। রাওদা মুবারকের পাশে গিয়ে চির মুক্তির প্রত্যাশা হৃদয়ে ধারণ করে জীবনের কার্যাবলির জন্য অনুতাপ ও হৃদয়ে সুপ্ত বেদনার কথা পেশ করেন গাফুরুর রাহীম মহান ¯্রষ্টার সমীপে। বৈশ্বিক মহামারির ফলে গত বছরের ন্যায় এবছরও যিয়ারতের প্রতিক্ষমান বহিবিশ্বের মুমিন মুসলমানদের জন্য হারামাইন শারিফাইন যিয়ারতে যাবার সে সুযোগ হচ্ছে না। তথাপি এ সময়ে এতদবিষয়ে সম্যক আলোকপাত করা হলো যেন সর্বশক্তিমান রাব্বে কারীম তাঁর খাস রহমত ও প্রিয়তম হাবীবের ওয়াসিলায় এ কঠিন অবস্থা থেকে নাজাত দান করেন।
মুমিন মুসলমানের আবেগ, উচ্ছাস ও ভালোবাসার কেন্দ্রস্থল নবীজির শহর মদীনা মুনাওয়ারা। যেথায় পবিত্র রাওদা মুবারকে আছেন হায়াতুন্নবী রাহমাতুল লিল আলামীন। যিনি কিয়ামতের কঠিন নিধানে অসহায় গুনাহগার উম্মতের সুপারিশকারী। যার প্রতি ভালোবাসা ঈমানের পূর্ণতার শর্ত। আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত লাভ করতে মুমিনগণের জন্য তাঁর শাফাআতই অবলম্বন। সেই মহিমান্বিত রাসূলে খোদা শাফীউল মুযনিবীন, মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারতে যাওয়া, তাঁরই পদস্পর্শে ধন্য মদীনা নগরীতে মুমিনের উপস্থিতি নিশ্চয়ই গৌরব ও সৌভাগ্যের বিষয়।
মহান আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
وَلَوْ اَنَّهُمْ اِذْ ظَّلَمُوْا اَنْفُسَهُمْ جَاءُوْكَ فَاسْتَغْفَرُوْا اللهَ وَ اسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُوْلُ لَوَجَدُوْا اللهَ تَوَابًا رَّحِيْمًا
(سورة النساء:৬৪)
-যেসব লোক নিজেদের (পাপকাজের মাধ্যমে) উপর যুলুম করেছেন, তখন যদি আপনার কাছে আসতো অতঃপর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতো এবং রাসূলও যদি তাদেরকে ক্ষমা করিয়ে দিতেন, অবশ্যই ঐসব লোক আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও মেহেরবান পেতো। (সূরা নিসা, আয়াত-৬৪)
এ আয়াতের তাফসীরে ইমাম হাফিয ইমাদুদ্দীন ইবনে কাসীর (র.) (৭০১-৭৭৪ হিজরী) বলেন,
اَلْاَيَةُ  يُرْشِدُ تَعَالَي اَلْعُصَاَة وَ الْمُؤْمِنِيْنَ إِذَا وَقَعَ مِنْهُمُ الْخَطَاءُ وَ الْعِصْيَانُ أَنْ يَأْتُوْا إِلَي الرَّسُوْلِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ فَيَسْتَغْفِرُوا اللهَ عِنْدَهُ وَ يَسْأَلُوْهُ أَنْ يَّسْتَغْفِرَ لَهُمْ فَإِنَّهُمْ إِذَا فَعَلُوْا ذَلِكَ تَابَ اللهُ عَلَيْهِمْ وَ غَفَرَلَهُمْ وَ لِهَذَا قَالَ لَوَجَدُ اللهَ تَوَّاتًا رَحِيْمًا
( تفسير لإبن كثير ج২ ص ২৮৭)
অর্থাৎ এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা গুনাহগারদের দিক নির্দেশনা দিচ্ছেন যে, যখন তাদের মাধ্যমে কোন ত্রুটি বিচ্যুতি তথা অপরাধমূলক কার্যাবলি সংঘটিত হয়ে যায়, তারা যেনো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খিদমতে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে। অর্থাৎ রাসূলের কাছে গিয়ে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাওয়া তথা সুপারিশ করার জন্য আবেদন করে। অতঃপর তারা যখন উক্ত পদ্ধতিতে ক্ষমা চাইবে, আল্লাহকে ক্ষমাকারী ও অতিশয় দয়ালু হিসেবে পাবে। আর এজন্যই আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন,
 لَوَجَدُوْا اللهَ تَوَّابًا رَّحِيْمًا
-অবশ্যই তারা আল্লাহ তাআলাকে তাদের জন্য ক্ষমাকারী ও অতিশয় দয়ালু হিসেবে পাবেন। (সূত্র: তাফসীরে ইবনে কাসীর ২:২৮৭)
উপরোক্ত আয়াত এবং তাফসীরের মাধ্যমে প্রস্ফুটিত হয় যে, রাব্বে কারীমকে তাওবা কবুলকারী অতিশয় দয়ালু হিসেবে পাওয়ার জন্য নিম্ন বর্ণিত পদ্ধতি বর্ণনা করা হয়েছে-
ক. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকটে হাযির হওয়া।
খ. আল্লাহ তাআলার কাছেই ইসতিগফার তথা ক্ষমা প্রার্থনা করা।
গ. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলার সমীপে সুপারিশকারী হিসেবে পেশ করা।
আর যেকোনো মুমিন ব্যক্তি উপরোক্ত পদ্ধতি পালনে সক্ষম হলে সে অবশ্যই আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার ক্ষমা ও রহমত লাভে ধন্য হবে। সাহাবায়ে কিরাম (রা.) সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হয়েছেন, তাঁর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আল্লাহর দরবারে নিজেদের জীবনের সমুদয় কর্মের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। আর সাহাবাগণের পরবর্তীদের থেকে কিয়ামত পর্যন্ত আগত মুমিনগণের জন্য যদিও সরাসরি তাঁর সাক্ষাৎ লাভ সম্ভব নয় কিন্তু যিয়ারতের মাধ্যমে তাদের জন্যও উপরোক্ত পদ্ধতি অনুসরণে ক্ষমা চাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
কেননা রাহমাতুল্লিল আলামীন নূরে মুজাসসাম মাহবূবে খোদা মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি দুনিয়ার যে কোন প্রান্ত হতে কোন উম্মত সালাত-সালাম প্রেরণ করলে, তাঁর নিকট পৌঁছানো হয় এবং তিনি উত্তর দিয়ে থাকেন, উম্মতের দুরূদ শরীফের হাদিয়া গ্রহণ করেন। আর মদীনা তায়্যিবায় তাঁর রাওদা মুবারকের পাশে গিয়ে সালাত ও সালাম পেশ করলে সরাসরি তিনি শুনে থাকেন। যেমন হাদীস শরীফে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ اَبِيْ هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّي اللهُ عَلَيْهِ وَ سَلَّمَ مَنْ صَلَّي عَلَيَّ عِنْدَ قَبْرِيْ سَمِعْتُهُ وَ مَنْ صَلَّي عَلَيَّ مِنْ بَعِيْدٍ أُعْلِمْتُهُ
( قال الإمام السخاوي رحمه الله  سنده جيد  القول البديع ص ১৫৪ )
-হযরত আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আমার কবরের পাশে আমার প্রতি দুরূদ পেশ করে আমি তাকে শুনতে পাই। যে ব্যক্তি দূর থেকে দুরূদ পাঠ করে তা আমার কাছে পেশ করা হয়। (ইমাম সাখাবী বলেন, হাদীসের সনদ জায়্যিদ। আল কাউলুল বাদী, পৃষ্ঠা: ১৫৪)
ঈমানদারগণের আশ্রয়স্থল মদীনা মুনাওয়ারাহ: আল্লাহ তাআলা পবিত্র মদীনা নগরীকে যেভাবে ঈমানের বিস্তৃতির কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন আর দুনিয়ার চতুর্দিকে সেখান থেকেই ঈমানের নূর ছড়িয়ে দিয়েছেন, তেমনিভাবে মুমিনের প্রশান্তি ও ঈমানের আশ্রয়স্থল করেছেন মদীনা তায়্যিবাহ।
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم  قال إِنَّ الإِيمانَ لَيَأْرِزُ إلى المدينة كما تَأْرِزُ الحيةُ إلى جُحْرها
(صحيح البخاري:১৮৭৬ وصحيح مسلم:১৪৮)
-হযরত আবূ হুরাইরাহ (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ইরশাদ করেছেন, নিশ্চয়ই ঈমান মদীনায় আশ্রয় লাভ করবে যেমন সর্প তার গর্তে ফিরে এসে আশ্রয় লাভ করে থাকে। (সহীহ বুখারী: ১৮৭৬, সহীহ মুসলিম: ১৪৮)
উপরোক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (র.) বলেন,
اي إنها كما تنتشر من جحرها في طلب ما تعيش به فإذا راعها شيئ رجعت إلي جحرها كذلك الإيمان انتشر في المدينة وكل مؤمن له من نفسه سائق إلي المدينة لمحبته في النبي صلي الله عليه وسلم فيشتمل ذلك جميع الأزمنة لأنه في زمن النبي صلي الله عليه وسلم للتعليم منه و في زمن الصحابة و التابعين و تابعيهم للإقتداء بهديهم و من بعد ذلك لزيارة قبره صلي الله عليه و سلم و الصلاة في مسجده و التبرك بمشاهدة آثاره و آثار أصحابه
( فتح الباري الجزء الرابع, صفحة ১১১)
-সর্প যেভাবে খাদ্যের তালাশে গর্ত হতে বের হয় এবং কোন কিছু তাড়া করলে গর্তে ফিরে এসে নিরাপত্তা ও প্রশান্তি লাভ করে থাকে তেমনিভাবে ঈমান মদীনা তায়্যিবাহ হতে বিস্তার লাভ করেছে এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি ভালোবাসার কারণেই প্রত্যেক মুমিনের হৃদয়ের আকর্ষণ মদীনা তায়্যিবার দিকে। এ আকর্ষণ সর্বযুগে এবং সর্বকালে মুমিনের অন্তরে বিদ্যমান। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে মুমিনগন মদীনা তায়্যিবায় এসেছেন তাঁর নিকট হতে শিক্ষা গ্রহণের জন্য, সাহাবা ও তাবিঈন ও তাব-ই তাবিঈগনের যুগে এসেছেন তাঁদের দিক নির্দেশনানুযায়ী জীবন গড়ার জন্য, তাঁদের পরবর্তী যুগে আসছেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারাতের উদ্দেশ্যে, তাঁর মসজিদে নামায আদায় করা এবং তাঁর স্মৃতিবিজড়িত স্থান ও সাহাবাদের স্মৃতিবিজড়িত স্থান হতে বারাকাত লাভের জন্য। (ফতহুল বারী, ৪:১১১)
তাই প্রকৃত মুমিনের হৃদয় সদাব্যাকুল মদীনা তায়্যিবার পানে। মদীনাই হচ্ছে তাঁর আশ্রয়স্থল, হৃদয়ের প্রশান্তি। সুযোগ পেলেই জীবনের শত ব্যস্ততাকে পেছনে ফেলে সে যেতে চায় মদীনা তায়্যিবায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখার আকুতি হৃদয়ে ধারণ করে রাওদার পাশে হাজির হয়। রাওদাপাকে তিনি জীবিত, সালাম শুনবেন এবং সালামের উত্তরও প্রদান করবেন এ বিশ্বাস হৃদয়ে ধারণ করে তাঁর খিদমতে সালাম পেশ করেন, তাঁর পদস্পর্শে ধন্য রিয়াদুল জান্নাহ ও মসজিদে নববীতে নামায আদায় করে নিজেকে ধন্য করেন।
রাওদা মুবারক যিয়ারতের হুকুম
সায়্যিদুল মুরসালীন উম্মতের কান্ডারী নবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারত করা উলামায়ে কিরামের ইজমার ভিত্তিতে সর্বোত্তম আমলসমূহের অন্যতম। এর মাধ্যমে মহান রবের নৈকট্য লাভ করা যায়। নিম্নে এ বিষয়ে ফুকাহা ও মুজতাহীদ উলামায়ে কিরামের সিদ্ধান্ত হতে সম্যক আলোকপাত করা হলো।
ইমাম হাফিয আবূ আব্দুল্লাহ আল-হুসাইন বিন হাসান আল-হালীমী (৩৩৮-৪০৩ হিজরী) বলেন,
فأما اليوم فمن تعظيمهم زيارته فقد جاء عنه صلي الله عليه وسلم من زارني بعد وفاتي فكأنما زارني في حياتبي و من تعظيمهم تعظيم حرمه أعني المدينة و الانتهاء كما حرمه منها وقتها و أكرم أهلها لأجل سلفه الذين آووه و نصروه
(المنهاج في شعب الايمان ج২ ص১৩০)
-বর্তমান সময়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারাতে যাওয়া হচ্ছে তাঁর প্রতি সম্মান প্রর্দশনের অন্যতম মাধ্যম। যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, আমার ওফাতের পর যে ব্যক্তি আমার যিয়ারত করলো, সে যেন আমার জীবনকালীন অবস্থায় সাক্ষাৎ করলো। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হরম তথা মদীনা মুনাওয়ারার সীমানা, তথাকার অধিবাসী যাঁরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আশ্রয় দিয়েছেন এবং তাঁকে সাহায্য সহযোগিতা করেছেন, তাঁদেরকে সম্মান প্রদর্শন করাও রাসূলুল্লাহসাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মান প্রদর্শনের অন্তর্ভূক্ত। (আল-মিনহাজ ফি শুয়াবুল ঈমান, খন্ড-২, পৃষ্ঠা ১৩০)
ইমাম আবূ ইসহাক ইবরাহীম বিন আলী বিন ইউছুফ আশ-শিরাজী আশ-শাফিয়ী (ওফাত: ৪৭২হিজরী) বলেন,
و يستحب زيارة قبر رسول الله صلي الله عليه وسلم لما روي ابن عمر رضي الله عنهما أن النبي صلي الله عليه وسلم قال من زار قبري وجبت له شفاعتي و يستحب أن يصلي في مسجد رسول الله صلي الله عليه و سلم لقوله صلي الله عليه وسلم صلاة في مسجدي هذا تعدل ألف صلاة في غيره من المساجد و بالله التوفيق
(المهذب ج১ ص২৪০)
-রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাওদা মুবারক যিয়ারত করা মুস্তাহাব। কেননা হযরত ইবনে উমর (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার রাওদা যিয়ারাত করবে, তার জন্য আমার শাফাআত অবধারিত’। এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারতের সাথে সাথে মসজিদে নববীতে নামায আদায় করাও মুস্তাহাব। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আমার মসজিদে এক ওয়াক্ত নামায আদায় করা অন্যান্য মসজিদে এক হাজার ওয়াক্ত নামায আদায়ের সমতুল্য’। (আল-মুহায্যাব, খন্ড:১ পৃষ্ঠা:২৪০)
ইমাম মুওয়াফফিকুদ্দীন আবূ মুহাম্মাদ বিন আহমাদ বিন মুহাম্মাদ বিন কুদামাহ আল-মাকদিসী আল-হাম্বলী রাহিমাহুল্লাহ (৫৪১-৬২০ হিজরী) বলেন,
فإذا فرغ من الحج استحب له زيارة قبر النبي صلي الله عليه واله وسلم و قبر صاحبيه رضي الله عنهما
(المقنع في فقه الامام احمد بن حنبل الشيباني ص১৩০)
-হজ্জ পালনকারীর জন্য মুসতাহাব হচ্ছে, হজ্জের কার্যাবলী শেষ করে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথিদ্বয় তথা হযরত আবূ বকর ও উমর (রা.) এর যিয়ারত করা। (আল-মুকনী ফি ফিকহিল ইমাম আহমদ বিন হাম্বাল আশ-শাইবানী পৃষ্ঠা:১৩০)
শাইখুল ইসলাম আল্লামা আলাউদ্দীন আবিল হাসান আলী আল-মারদাওয়ী হান্বলী (৮১৭-৮৮৫ হিজরী) বলেন,
فاذا فرغ من الحج استحب له زيارة قبر النبي صلي الله عليه و سلم و قبر صاحبيه هذا المذهب و عليه الاصحاب قاطبة متقدمهم و متأخرهم
(الانصاف في معرفة الراجح من الخلاف ج৪ ص ৫৩)
-হজ্জের কার্যাবলী শেষ হয়ে গেলে মুস্তাহাব হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের রাওদা মুবারক ও তাঁর সাথিদ্বয় তথা আবূ বকর ও উমর (রা.) এর রাওদা মুবারক যিয়ারত করা। এ সিদ্ধান্তই পূর্ববর্তী ও পরবর্তী যুগের উলামায়ে কিরামের। (আল-ইনসাফ, খন্ড ৪, পৃষ্ঠা ৫৩)
ইমামুল হুমাম আব্দুল হাই লাকনাওয়ী রাহিমাহুল্লাহ (১২৬৪-১৩০৪ হিজরী) বলেন,
اتفقوا على أن زيارة قبره صلىوسلم           من أعظم القربات وأفضل المشروعات ومن نازع في مشروعيته فقد ضل وأضل اهـ
(التعليق الممجد علي مؤطأ محمد ص৩৯৬)
-উলামায়ে কিরামের ঐকমত্যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারত করা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নৈকট্য প্রাপ্তির মহান অবলম্বন এবং শরীআতসম্মত উত্তম আমল। যে ব্যক্তি এ বিষয় শরীআতসম্মত হওয়া নিয়ে বাধানুবাদ করে সে নিজে পথভ্রষ্ট এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করছে। (আত-তা’লিকুল মুমাজ্জাদ আলা মুয়াত্তা মুহাম্মাদ, পৃষ্ঠা ৩৯৬)
যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফরের হুকুম
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারত করা একটি উত্তম আমল। আর এ উদ্দেশ্যে সফর করাও শরীআত সম্মত, মুসতাহাব এবং আল্লাহ তাআলার নৈকট্য প্রাপ্তির উত্তম অবলম্বন। সাধারণত মুমিনগণ মদীনা তায়্যিবায় যখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করেন তখন তাঁরা এর সাথে সাথে মসজিদে নববীতে নামায আদায়েরও নিয়ত করে থাকেন। আর মদীনা তায়্যিবায় পৌঁছে সম্ভব হলে তারা রিয়াদুল জান্নাতে নামায আদায় করেন। অন্যতায় মসজিদে নববীর যেকোনো স্থানে নামায আদায় করে নেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহর যিয়ারত ও তাঁর খিদমতে সালাম পেশ করেন। যারা মদীনা তায়্যিবায় রাসূলুল্লাহ ব এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে আসেন অথচ মসজিদে নববীতে নামায আদায়ের নিয়ত করেন না, এমন ব্যক্তি পাওয়া দুষ্কর হবে। এতদসত্তে¡ও একমাত্র যিয়ারতের উদ্দেশ্যেই কেউ যদি সফর করেন, চার মাযহাবের অধিকাংশ উলামায়ে কিরামের অভিমত অনুযায়ী তার এ সফর শরীআত সম্মত ও জায়িয। জমহুর উলামাগণ সর্বযুগে এমনই অভিমত প্রদান করেছেন। নিম্নে কিছু আলোকপাত করা হলো। যেমন-
ইমাম আবূ হানীফা (র.) (৮০-১৫০ হিজরী) বলেন,
رَوَي الْحَسَنُ عَنْ اَبِيْ حَنِيْفَةَ رَحِمَهُ اللهُ تَعَالَي عَنْهُ أَنَّهُ إِذَا كَانَ الْحَجُّ فَرْضًا فَألْاَحْسَنُ لِلْحَاجِّ أَنْ يَّبْدَأَ بِالْحَجِّ ثُمَّ يَثْنِي بِالزِّيَارَةِ وَإِنْ بَدَأَ بِالزِّيَارَةِ جَازَ انتهي
(مناسك الملا علي القاري ص৫০৩)
-ফরয হজ্জ আদায়কারীর জন্য উত্তম হচ্ছে প্রথমে হজ্জ সম্পন্ন করা। অতঃপর দ্বিতীয়বার রাসূলুল্লাহ ব এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে যাওয়া। তবে প্রথমেই যদি যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর শুরু করেন তাও জায়িয হবে। (মানাসিক মুল্লা আলি আল-কারী পৃষ্ঠা: ৫০৩)
ইমাম আল-মাওয়ারদী (৩৬৪-৪৫০) বলেন,
فأما زيارة قبر النبي صلي الله عليه وسلم فمأمور بها و مندوب إليها
(الحاوي الكبير ج৬ ص২৯০)
-রাসূলুল্লাহ ব এর রাওদা মুবারক যিয়ারত করা শরীআত নির্দেশিত বিষয়। আর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা মানদুব বা মুসতাহাব। (আল-হাওয়ী আল কাবীর খন্ড:৬ পৃষ্ঠা:২৯০)।
আবু যাইদ ইয্যুদ্দীন আবি মুযাফফার ইয়াহইয়া বিন মুহাম্মাদ বিন হুবাইরাহ আল-বাগদাদী আল-হান্বলী রাহিম্হাুল্লাহ (৪৯৯-৫৬০ হিজরী) বলেন,
واتفقوا علي استحباب زيارة قبر المصطفي صلي الله عليه و سلم و صاحبيه أبي بكر وعمر المدفونين رضي الله عنهما و ندبوا إليها
(اجماع الامة الاربعة و اختلافهم ج-১  ص- ৩৫২)
-চার মাযহাবের ইমামগণ তথা ইমাম আবূ হানীফা, ইমাম মালিক, ইমাম শাফিঈ ও ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল (র.) এর ইজমা তথা ঐকমত্যে রাসূলুল্লাহ ব এর যিয়ারত এবং তাঁর দুই সাথি হযরত আবূ বকর ও হযরত উমর (রা.) এর যিয়ারত করা মুস্তাহাব বা সাওয়াবের কাজ। আর তাঁদের যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাও শরীআত সম্মত। (ইজমাউ উম্মতিল-আরবাআ ও ইখতিলাফিহিম, খন্ড:১ পৃষ্ঠা:৩৫২)
ইমাম নববী শাফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ (৬৩১-৬৭৬ হিজরী) বলেন,
أَنَّ زِيَارَةَ قَبْرِ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ أَهَمِّ الْقُرُبَاتِ وَأَنْجَحِ الْمَسَاعِي فَإِذَا انْصَرَفَ الْحُجَّاجُ وَالْمُعْتَمِرُونَ مِنْ مَكَّةَ اُسْتُحِبَّ لَهُمْ اسْتِحْبَابًا مُتَأَكَّدًا أَنْ يَتَوَجَّهُوا إلَى الْمَدِينَةِ لِزِيَارَتِهِ صَلَّى اللهُ عليه وسلم وَيَنْوِيْ الزَّائِرُ مَعَ الزِّيَارَةِ التَّقَرُّبَ وَشَدَّ الرَّحْلِ إلَيْهِ وَالصَّلَاةَ فِيه
(المجموع للنووي ج৮ ص২৭২)
-নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ ব এর যিয়ারত আল্লাহ তাআলার দরবারে মকবুলিয়াত ও তাঁর নৈকট্য প্রাপ্তির উত্তম অবলম্বন। তাই হজ্জ এবং উমরাহ পালনকারী হজ্জ ও উমরাহ সম্পন্ন করে মক্কা শরীফ হতে মদিনা শরীফে রাসূলুল্লাহ ব এর রাওদা শরীফ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা গুরুত্বপূর্ণ মুসতাহাবের অন্যতম। অতএব যিয়ারতের সফরের নিয়তের সাথে যিয়ারতকারী আল্লাহ তাআলার নৈকট্যপ্রাপ্তি, মসজিদে নববীর যিয়ারত ও তথায় নামায আদায়েরও নিয়ত করে নেবেন। (আল-মাজমু’, ৭:২৭২)
ইমাম ইবনুল হাজ্জ মালিকী রাহিমাহুল্লাহ (ওফাত: ৭৩৭ হিজরী) বলেন-
و الحاصل من اقوالهم أنها قربة مطلوبة لنفسها لاتعلق لها بغيرها فتنفرد بالقصد و شد الرحال إليها و من خرج قاصدا إليها دون غيرها فهو في أجل الطاعات وأعلاها فهنيئا له ثم هنيئا له اللهم لا تحرمنا من ذلك بمنك يا كريم
(المدخل ج১ ص২১৬)
-যিয়ারত সম্পর্কে বিভিন্ন অভিমতের সার কথা হচ্ছে, ইহা স্বতন্ত্র ভাবেই আল্লাহ তাআলার নৈকট্য প্রাপ্তির একটি মাধ্যম এবং অন্যান্য ইবাদত হতে এর স্বাতন্ত্রতা সুপ্রতিষ্ঠিত। অতএব অন্য কোন উদ্দেশ্য ব্যতিত শুধুমাত্র রাসূলুল্লাহ ব এর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করা একটি মর্যাদাপূর্ণ উত্তম আমল। আর যে ব্যক্তি অন্য কোন উদ্দেশ্য ব্যতিত একমাত্র যিয়ারতের উদ্দেশ্যে বের হলো সে গুরুত্বপূর্ণ ও উত্তম একটি আমল করলো। মারহাবা অতঃপর মারহাবা সে ব্যক্তিকে, যে এ মহান সৌভাগ্য লাভ করলো। ইয়া আল্লাহ! এমন সৌভাগ্যশালী আমল হতে আমাদেরকে বঞ্চিত করো না, হে পরম দয়াশীল। (আল-মাদখাল, খন্ড:১ পৃষ্ঠা:২১৫)।
ফেইসবুকে আমরা...