নতুন প্রজন্মের, মনন, চিন্তা ও আদর্শবোধ তৈরীর ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা থাকে শিক্ষাব্যবস্থায়র। শিক্ষাব্যবস্থার গতিপ্রকৃতি নির্ধারণে অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে নির্ধারিত পাঠ্যপুস্তকসমূহ। আর এ কারণইে পাঠ্যপুস্তকের গুরুত্ব অপরিসীম। বহুবিধ কারণে চলতি শিক্ষাবর্ষের পাঠ্যপুস্তকসমূহ জাতিগঠনে কাঙ্খিত ভূমিকা রাখার অনুপযোগী বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। আমাদের দেশে ইসলামী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে যে মাদরাসা শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে উঠছে, সেই মাদরাসাসমূহের পাঠ্যক্রমে ইসলামী বিষয়াবলি বহু বছর ধরে সংকোচিত করা হচ্ছিল, চলতি শিক্ষাবর্ষে সেই সংকোচনের মাত্রা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। তদুপরি মুসলিম সংখ্যগরিষ্ঠ এই দেশের সাধারণ শিক্ষাব্যবস্থায়ও ক্রমেই ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব হ্রাস করা হচ্চে। তার সাথে আবার যুক্ত হয়েছে বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে ইসলাম ও এ দেশের সংস্কৃতির সাথে সাংঘর্ষি ক নানাবিধ তত্ত্ব ও মতবাদের সংযোজন। সেই সাথে কিছু অপ্রয়োজনীয় বিষয় সংযোজন করে বিজ্ঞান শিক্ষাকেও সংকোচিত করা হয়েছে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থায়। সব মিলিয়ে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থাকে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্ম ও সংস্কৃতির বিরুদ্ধে চাপিয়ে দেওয়া পশ্চিমা সংস্কৃতিকে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান। ফলে নতুন প্রজন্মকে ইসলামী ও এ দেশীয় সংস্কৃতির সাথে মানানসই শিক্ষাপ্রদানের নিমিত্তে অবিলম্বে বর্তমান পাঠ্যক্রমের আমূল পরিবর্তন করা বাঞ্জনীয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রী প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদদের পরামর্শক্রমে এ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের প্রকৃত সংস্কৃতিকে ধারণ করে যথোপযুক্ত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দিতে হবে।
পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই রাষ্ট্রের ভাষার প্রশ্নটি বারবার সামনে এসেছে। তৎকালীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের সিংহভাগ মানুষের মাতৃভাষা বাংলা হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী বারবার বাংলা ভাষাকে তার ন্যায্য মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে বাঙালি আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়তে বাধ্য হয়েছিল। ১৯৫২ সালের একুুশে ফেব্রুয়ারিতে সে আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপের সাক্ষী হয় এ দেশ, মাতৃভাষাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দানের দাবিতে আত্মত্যাগ করেন বহু বাংলাভাষী। সে দিনের স্লোগান ছিল “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই”। রাষ্ট্রভাষা বলতে রাষ্ট্রের সর্বত্র বাংলা ভাষাকে প্রতিষ্ঠিত করাই ছিল সে আন্দোলনের লক্ষ্য। কিন্তু এখনও উচ্চশিক্ষা, আদালতসহ বহুক্ষেত্রে বাংলা ভাষা, ব্যবহার শতভাগ নিশ্চিত হয়নি। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সদর্থক ভূমিকা কাম্য।