1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
শাইখ ইবনু আরাবী’র পরিচয় ও তার ওয়াহদাতুল উজুদ তত্ত্বের ব্যাখ্যা
জবাব দিচ্ছেন: মাওলানা আবূ নছর মোহাম্মদ কুতুবুজ্জামান তাফাদার
  • ৩ মে, ২০২১

প্রশ্ন : ‘শায়খ ইবনু আরাবী’ কে ছিলেন? তার সংক্ষিপ্ত জীবনী ও তার ‘ওয়াহদাতুল উজুদ’ এর তত্ত্ব যে তত্ত্বের কারণে কেউ কেউ তার উপর কুফরীর ফতওয়া দিয়েছেন, এ সম্পর্কে জানতে চাই।

জবাব: ‘ইবনে আরাবী’ যিনি মহিউদ্দিন ইবনু আরাবী নামে অধিক খ্যাত, প্রখ্যাত আরব সূফী-সাধক, সুউচ্চ তাত্ত্বিক, জ্ঞানী, সুপ্রসিদ্ধ লেখক ও দার্শনিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি ২৮ জুলাই, ১১৬৫ সালে স্পেনের মুর্সিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। এ জন্য তাকে আন্দালুসী ও আল-মুর্সী বলা হয়ে থাকে। তিনি ১০ নভেম্বর ১২৪০ খ্রিষ্টাব্দে ইন্তিকাল করেন। সূফী হিসেবে তার বিশেষ খ্যাতি ছিল। সূফীতত্ত্বে তার অনবদ্য অবদানের কারণে তিনি ‘আশ শাইখুল আকবর’ উপাধিতে ভূষিত হন। তার সর্বাধিক প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘আল ফুতুহাতুল মাক্ক্যিয়্যাহ’ তাসাওউফের পূর্ণাঙ্গ রীতি-নীতি সম্বলিত উৎকৃষ্ট গ্রন্থ।

‘ওয়াহদাতুল উজুদ’ হচ্ছে মহিউদ্দীন ইবনে আরাবীর দুর্বোধ্য তাত্ত্বিক এমন এক মাসআলা, যা অনেকে সঠিকভাবে উপলব্ধি করতে না পেরে কিংবা বোধগম্যতার ক্ষেত্রে এটি সর্বসাধারণের জন্যে বিপজ্জনক মনে করে এর বিরোধিতা করেছেন। আবার অনেকে সঠিক ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে তার যথার্থতা খুঁজে পেয়ে সমর্থন ও প্রশংসা করেছেন। ‘ওয়াহদাতুল উজুদ’ এর সঠিক অর্থ হলো “এই জগতের আসল এবং পরিপূর্ণ অস্তিত্ব কেবল এক আল্লাহর। তাঁর মহিমার কাছে অন্য সকল সৃষ্টির অস্তিত্ব এমনভাবে বিলীন হয়েছে যে, যেন সেগুলো থেকেও নেই। যেমন দিনে সূর্যের আলোতে নক্ষত্র দেখা যায় না।

শাব্দিক বিচারে কেউ কেউ তাকে এ থেকে ‘হুলুল’ তথা আল্লাহর তাআলা আকারবিশিষ্ট হয়ে সৃষ্টিতে প্রকাশিত হওয়ার এবং ‘ইত্তিহাদ’ তথা স্রষ্টা ও সৃষ্টি একীভূত হওয়ার প্রবক্তা বলে ধারণা করেছেন। কিন্তু বাস্তবে এ মহান বুযুর্গ এমন ভ্রান্ত বিশ্বাসের প্রবক্তা না হওয়ার বিষয়ই তার পরবর্তী লেখা থেকে পরিষ্কার হয়েছে বলে বহু গবেষক তাদের গবেষণায় তুলে ধরেছেন এবং উক্ত বিষয়ের যথার্থ বিশ্লেষণ করেছেন। এককথায়, ইলমে শরীআত ও মা’রিফাতে অভিজ্ঞ মাশায়িখগণের ধারণা হলো তিনি এসবের প্রবক্তা নন। বরং তিনি আল্লাহর মহীমায় নিজেকে এমনভাবে ফানা (বিলীন) করতে সমর্থ হয়েছিলেন যেখানে অন্য কোনো অস্তিত্ব দেখার কোনো সুযোগ তার ছিল না। তাই একক যে অস্তিত্বের কথা তার উক্ত তত্ত্বে উল্লেখ করেছেন সেটা দ্বারা মহান আল্লাহর অস্তিত্বকেই বুঝানো হয়েছে। সর্বোপরি বিষয়টি জটিল, যা বড় বড় মনীষীগণ পর্যন্ত বুঝতে হিমশিম খেয়েছেন। তাই এ বিষয়ের হাকীকত সম্পর্কে আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (র.), শাহ ওয়ালীউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী (র.)সহ শরীআত ও মারিফাতের মান্যবর বহু মনীষী তাকে সমর্থন করে তার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তার প্রায় ১৫০খানা ধর্মীয় তাত্ত্বিক গ্রন্থ পরবর্তী যুগের মনীষীগণের দুর্লভ জ্ঞানলাভের সহায়ক হিসেবে ভূমিকা রেখেছে, যা তাকে শ্রদ্ধার আসনে সমাসীন করে স্মরণীয় ও বরণীয় করে রেখেছে। অনেকের মতে, এ সংখ্যা মূলত তার রচিত গ্রন্থাবলির অর্ধেক। তার রচিত অনেক গ্রন্থাদি অপ্রকাশিত রয়ে গেছে। (তাবাকাতুল আউলিয়া, ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ৪৬৯; সংক্ষিপ্ত ইসলামী বিশ্বকোষ, প্রথম খণ্ড; আত তাকাশশুফ আন মুহিম্মাতিত তাসাওউফ; তালিমুদ্দীন)

 

প্রশ্নকারী:

আব্দুল হাই মাসুম

মৌলভীবাজার টাউন কামিল মাদরাসা

ফেইসবুকে আমরা...