1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
নামাযের পর সম্মিলিতভাবে দুআ করা কি জায়িয?
জবাব দিচ্ছেন: মাওলানা আবূ নছর মোহাম্মদ কুতুবুজ্জামান তাফাদার
  • ২ জুলাই, ২০২১

প্রশ্ন: নামাযের পর নাকি দুআ করা বিদআত? নামাযের পর সম্মিলিতভাবে দুআ করা কি জায়িয? নামাযের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা কি? দলীলসহ জানতে চাই।

জবাব: নামাযের পর দুআ করা সুন্নাত, বিদআত নয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্বয়ং নামাযের পর দুআ করতেন এবং সাহাবায়ে কিরাম ও তৎপরবর্তী সকলেই নামাযের পর দুআ করতেন। উপরন্তু ফরয নামাযের পর দুআ অধিক কবূল হয় বলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ফরয নামাযের পর দুআ করতে বিশেষভাবে উৎসাহিত করেছেন। আর পবিত্র কুরআন মাজীদে নামাযের পর দুআ করার নির্দেশ সম্বলিত আয়াত রয়েছে। যেমন- তাফসীরে তাবারী গ্রন্থে এ সম্পর্কে লিখেছেন,

وقوله: (فإذا فرغت فانصب) اختلف أهل التأويل في تأويل ذلك، فقال بعضهم: معناه: فإذا فرغت من صلاتك، فانصب إلى ربك في الدعاء، وسله حاجاتك.

-মহান আল্লাহ তাআলার বাণী “যখন আপনি (নামায) সমাপ্ত করে অবসর হবেন তখন বিশেষভাবে (দুআ করতে) নিবিষ্ট হবেন।” ব্যাখ্যাকারকগণ এর ব্যাখ্যায় মতানৈক্য করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, এর মর্মার্থ হলো “যখন আপনি নামায শেষ করবেন, তখন আপনার রবের নিকট দুআ করতে মনোযোগী হন এবং তাঁর নিকট আপনার প্রয়োজনীয় বিষয় যাচনা করুন।” উক্ত অভিমত পোষণ করেছেন সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ট মুফাসসির হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস (রা.)। (তাফসীরে তাবারী, ২৪/৪৯৩)
সুনান তিরমিযী কিতাবে এ সম্পর্কে এসেছে-

عن أبي أمامة، قال: قيل يا رسول الله: أي الدعاء أسمع؟ قال: جوف الليل الآخر، ودبر الصلوات المكتوبات – هذا حديث حسن

-হযরত আবূ উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) কে জিজ্ঞেস করা হলো, হে আল্লাহর রাসূল! কোন দুআ সর্বাধিক কবূল হওয়ার উপযুক্ত? তিনি বললেন, রাতের শেষ অংশ এবং ফরয নামায সমূহের পর। ইমাম তিরমিযী ইহাকে হাসান বলেছেন। (সুনান তিরমিযী, হাদীস- ৩৪৯৯)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের পর হাত তুলে দুআ করতেন বলে হাদীস শরীফের বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে। যেমন-

عن محمد بن أبي يحيى، قال: رأيت عبد الله بن الزبير ورأى رجلا رافعا يديه بدعوات قبل أن يفرغ من صلاته، فلما فرغ منها، قال: إن رسول الله صلى الله عليه وسلم لم يكن يرفع يديه حتى يفرغ من صلاته

-হযরত মুহাম্মদ ইবনে আবী ইয়াহইয়া থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (রা.) কে দেখেছি যে তিনি জনৈক ব্যক্তিকে নামাযে হাত তুলে দুআ করতে দেখলেন। তার নামায শেষ হলে বললেন, নিশ্চয়ই রাসূলুল্লাহ ব নামায শেষ না করে (দুআর জন্য) হাত তুলতেন না। (আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং ৩২৪)
তাছাড়া সম্মিলিত দুআ মুতলাক (শর্তহীন) ভাবে বৈধ ও উত্তম হওয়ার বিষয়ে বহু হাদীস রয়েছে। যেমন- হযরত সালমান (রা.) বলেন, নবী করীম ব ইরশাদ করেন, কোন জামাআত কিছু প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহর দরবারে হাত তুললে আল্লাহ তাআলার উপর ওয়াজিব হয়ে যায় তাদের প্রার্থিত বস্তু তাদের হাতে তুলে দেওয়া। (আল মু’জামুল কাবীর, হাদীস নং ৬১৪২)
হযরত হাবীব ইবনে মাসলামা (রা.) বর্ণনা করেন, রাসূল ব ইরশাদ করেছেন, যদি কিছু সংখ্যক লোক একত্রিত হয়ে এভাবে দুআ করে যে, তাদের একজন দুআ করতে থাকে, আর অপররা ‘আমীন’ ‘আমীন’ বলতে থাকে, তবে আল্লাহ তাআলা তাদের দুআ অবশ্যই কবূল করে থাকেন। (মুস্তাদরাকে হাকিম, হাদীস- ৫৪৭৮)
নামাযের পর সম্মিলিত দুআর বিষয়ে হাদীসে এসেছে, হযরত ছাওবান (রা.) হতে বর্ণিত, রাসূল ব বলেন, কোন ব্যক্তি লোকদের ইমাম হয়ে এমন হবে না যে, সে তাদেরকে বাদ দিয়ে দুআয় কেবল নিজেকেই নির্দিষ্ট করে। যদি এরূপ করে, তবে সে তাদের সহিত বিশ্বাসঘাতকতা করল। (তিরমিযী, হাদীস- ৩৫৭)
হযরত উমর (রা.) সালাতুল ইসতিসকার নামাযান্তে হযরত আব্বাস (রা.) এর ওসীলাহ নিয়ে যে দুআ করেছিলেন সে দুআ সম্মিলিত দুআ ছিল। হাদীস শরীফের ভাষ্য এরই ইঙ্গিত করে। তিনি উক্ত দুআয় বলেছিলেন,

‎اللهم إنا كنا إذا قحطنا استسقينا بنبيك فتسقينا، وإنا نستسقيك اليوم بعم نبيك أو نبينا فاسقنا، فيسقون- صحيح لابن خزيمة

 صحيح لابن حبان :২৮৬১

-হে আল্লাহ! আমরা যখন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে দুর্ভিক্ষ কবলিত হতাম, তখন তোমার নবীর ওয়াসীলা নিয়ে বৃষ্টি চাইতাম, আর তুমি আমাদেরকে বৃষ্টি দিতে। আর আজ আমরা তোমার নবীর চাচার ওসীলা নিয়ে বৃষ্টি চাচ্ছি, আমাদেরকে বৃষ্টি দাও, তাই তারা বৃষ্টি প্রাপ্ত হলেন। (সহীহ ইবনে খুযাইমাহ, হাদীস- ১৪২১; সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস- ২৮৬১)
হাদীসের বিভিন্ন ভাষ্য থেকে সম্মিলিতভাবে দুআ করার বিষয়টি প্রমাণিত আছে। যেহেতু সম্মিলিতভাবে দুআ করা নাজায়িয নয় তাই নামাযান্তে সম্মিলিত দুআ ও জায়িয।

জবাব দিচ্ছেন-
মাওলানা আবূ নছর মোহাম্মদ কুতুবুজ্জামান তাফাদার
প্রিন্সিপাল ও খতীব, আল ইসলাহ ইসলামিক সেন্টার
মিশিগান, আমেরিকা।

 

প্রশ্নকারী: মোয়াজ্জেম হোসেন চৌধুরী
কমলগঞ্জ, মৌলভীবাজার

ফেইসবুকে আমরা...