1. redwan.iub@gmail.com : admin2021 :
  2. admin@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
  3. editor@parwana.net : Parwana Net : Parwana Net
Logo
থার্টি ফার্স্ট নাইট উদযাপন বিজাতীয় সংস্কৃতি
মুহাম্মদ মাহমুদুল হাসান
  • ১ জানুয়ারী, ২০২১

বাংলাদেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটের মাধ্যমে ইংরেজি নববর্ষ উদযাপন এবং পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ পালনের রীতি দেখা যায়। খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬ সালে জুলিয়াস সিজার সর্বপ্রথম নববর্ষ উৎসবের প্রচলন করে। এরপর থেকে বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখ অনুযায়ী নববর্ষ পালিত হয়ে আসছে।
ইতিহাস অনুসন্ধান করলে পাওয়া যায়, নববর্ষ পালন প্রথার সাথে মুসলমানদের কোনো সম্পর্ক ছিল না। তাছাড়া বর্তমান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পয়লা জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ পালন করা বা থার্টি ফার্স্ট নাইটের মাধ্যমে গ্রেগরীয় বর্ষপঞ্জির প্রথম তারিখ উদযাপন করা খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের জাতিগত সংস্কৃতি। যেহেতু এই উৎসব এবং সংস্কৃতি খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের ধর্মীয় এবং জাতিগত পরিচয় বহন করে সে জন্য ইংরেজি নববর্ষ পালন করা ইসলামী শরীআত অনুমোদন করে না। ইসলামী শরীআতের প্রসিদ্ধ মূলনীতি, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَإنَّهُ مِنْهُمْ “যে ব্যক্তি যে সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে অর্থাৎ তার হাশর-নশর তাদের সাথে হবে।” (আবূ দাউদ)
একজন মুসলমানকে বিধর্মীদের যে কোন উৎসব থেকে নিজেকে দূরে রাখা কর্তব্য। এ সকল উৎসব-অনুষ্ঠান পালন করা তো দূরের কথা বরং এগুলোতে উপস্থিত হওয়াও নিষেধ। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, والذين لا يشهدون الزور وإذا مروا باللغو مروا كراماً

“আর যারা মিথ্যা কাজে যোগদান করে না এবং যখন অসার ক্রিয়াকর্মেও সম্মুখীন হয়, তখন মান রক্ষার্থে ভদ্রভাবে চলে যায়।” (সূরা ফুরকান, আয়াত ৭২)
এই আয়াতের (الزور) শব্দের ব্যাখ্যায় ইমাম ইবনু সীরীন, দাহহাক, ইকরামাহ মুজাহিদসহ প্রমুখ মুফাসসির বলেন, এখানে মিথ্যা কাজ বলতে বিধর্মীদের উৎসবের কথা বলা হয়েছে। যাতে মুসলমানদের উপস্থিত হওয়া জায়িয নেই। ইমাম বায়হাকী (র.) হযরত উমর (রা.) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন তোমরা আল্লাহর দুশমনদের উৎসব থেকে বিরত থাকো।
এ থেকে বুঝা যায় মুসলমানদের জন্য বিধর্মীদের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করাও অন্যায়, গর্হিত কাজ। যেখানে তাদের উৎসবে উপস্থিত হওয়াও অপরাধ সেখানে ইংরেজি নববর্ষের নামে খ্রিষ্টীয় উৎসব পালন করা কত জঘন্য হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় হিজরত করার পর দেখলেন মদীনাবাসী দুটি দিনকে খেলাধুলা এবং উৎসবের মাধমে উদযাপন করছে। এ সম্পর্কে তাদের জিজ্ঞেস করলে তারা বললেন, জাহেলী যুগে আমরা এ দুই দিনে উৎসব পালন করতাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বললেন, এ দুই দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তাআলা তেমাদের উত্তম দুটি দিন দিয়েছেন; ঈদুল আদ্বহা এবং ঈদুল ফিতর। (আবু দাঊদ)
এখানে একটি কথা লক্ষণীয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাবাসীদেরকে আনন্দ-উৎসব পালন করতে নিষেধ করেননি বরং বিজাতীয় সংস্কৃতি বাদ দিয়ে নিজস্ব উৎসব এবং সংস্কৃতি পালনের কথা বলেছেন। এই নিষেধের পেছনে কারণও আছে। যেমন, প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের জন্য নির্দিষ্ট কিছু বিধান এবং স্বতন্ত্র কিছু নিয়ম-কানুন নির্ধারিত থাকে। যার মাধ্যমে তাদের ধর্মীয় স্বকীয়তা ও জাতীগত পরিচয় ফুটে উঠে।
উৎসব-সংস্কৃতি সংক্রান্ত শরঈ নীতিমালা এবং ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় নববর্ষ উদযাপন করা ইসলামী সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত নয়। এমন সংস্কৃতি ও উৎসব পালন করার অর্থ হলো কোনো অনৈসলামিক কাজকে গ্রহণ করা। যার ফলাফল দাঁড়ায় কুফরী নতুবা কবীরাহ গুনাহ। উপরন্তু আমাদের দেশে থার্টি ফার্স্ট নাইটের পার্টিতে মদ্যপানের আসর, বেহায়াপনা ও নির্লজ্জতার আয়োজন করা হয়। তা কেবল নৈতিক অধঃপতনকেই ডেকে আনে। একজন সুস্থ মস্তিষ্কের লোক তা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। পহেলা বৈশাখ বা বাংলা নববর্ষ উদযাপনে মঙ্গল প্রদ্বীপ জ¦ালানো, হনুমান, পেঁচা সহ বিভিন্ন প্রাণির মুখোশ নিয়ে আনন্দ শোভাযাত্রা করা হিন্দু ধর্মকেই উপস্থাপন করে। একজন মুসলমানের জন্য এগুলো সমর্থন করা, এতে উপস্থিত হওয়া বা পালন করা হারামÑনিষিদ্ধ। মোটকথা, নববর্ষ পালন করার সংস্কৃতি কখনো মুসলমানদের ছিল না, তাই এগুলো থেকে বিরত থাকা মুসলমানদের জন্য আবশ্যক।

মুমিনের নববর্ষ
নতুন বছরের শুরুতে একজন প্রকৃত মুমিনের চিন্তা-ভাবনা উৎসব-আমেজের নয় বরং চিন্তা এবং ভয়ের। বিগত বছরের যাবতীয় কার্যাবলি সম্পর্কে মহান মালিকের ভয়ে কম্পিত থাকার। একটি বছরের সীমানায় দাঁড়িয়ে মুমিনের ভাবনা হলো, আমার জীবন থেকে আরো একটি বছর চলে গেল, আমি মৃত্যুর দিকে আরো একটি বছর এগিয়ে আসলাম। নতুন বছরে যদি আমি মারা যাই তাহলে মহান আল্লাহর দরবারে আমি কী পেশ করব? এই চিন্তা-ভাবনা যে মুমিনের অন্তরে থাকবে সে কখনো নতুন বছরের আগমনে আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠতে পারে না। হযরত উমর রা. বলেন,      حاسبوا أنفسكم قبل أن تحاسبوا

“তোমাদের কাছ থেকে হিসাব-নিকাশ গ্রহণের আগেই নিজেরা নিজেদের হিসাব করে নাও”।

এ জন্য একজন মুুমিন নববর্ষে নয় বরং প্রত্যেক দিনের শেষেই নিজের জীবনের হালখাতা উন্মোচন করে হিসাব-নিকাশ করবে। পরের দিনের শুরুতে মহান আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে, আল্লাহর কাছে দিনের কল্যাণ কামনা করবে। মুমিন জীবনে শরঈ মানদ-ের বাহিরে এসে আলাদা কোন দিনের মহত্ত্ব নেই। এ জন্য বলা হয়, মুমিনের প্রতিটি দিনই নববর্ষ। ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর দাদা স্বীয় সন্তান ছাবিতকে নিয়ে পারস্যের নববর্ষের দিন (নওরোয) হযরত আলী (রা.) এর কাছে গেলেন এবং কিছু হাদিয়া পেশ করলেন। (হাদিয়াটি সম্ভবত নববর্ষ উপলক্ষে ছিল) হযরত আলী (রা.) বললেন, মুমিনের প্রতিটি দিনই তো নববর্ষ। (আখবারু আবি হানীফাহ)

ফেইসবুকে আমরা...