আগামী ২০ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষেক হচ্ছে দেশটির নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের। এর আগে দেশটির বিদায়ী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভোটের ফল উল্টে দিতে সব রকমের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হন।
এখন কেমন হবে জো বাইডেনের সামনের দিনগুলো? তাঁর বিদেশ নীতি বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক কেমন হবে? প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর চার বছরের শাসনামলে মুসলিম বিশ্বে দ্বিমুখী নীতি অনুসরণ করেছেন। অবশ্য এটি তাঁর নিজ স্বার্থেই। তিনি একদিকে যেমন চীনের জিংজিয়াংয়ের নিপীড়িত উইঘুর মুসলিমদের বিষয়ে সোচ্চার ছিলেন, অন্যদিকে কাশ্মীরের মুসলমানদের বিষয়ে তিনি ছিলেন প্রায় নিশ্চুপ কিন্তু সবচেয়ে ক্ষতি করেছেন ফিলিস্তিনিদের। পূর্ব জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি, তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস পূর্ব জেরুজালেমে স্থানান্তর, দখলকৃত সিরিয়ার গোলান মালভূমিকে ইসরায়েলের বলে স্বীকৃতি, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলের অবৈধ বসতি নির্মাণকে জায়িয এবং সবশেষে ফিলিস্তনের স্বার্থ বিরোধী ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইনের চুক্তি সব কিছুই করেছেন তিনি। ট্রাম্প অবশ্য মিয়ানমারে গণহত্যার শিকার রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিষয়ে খুব জোরালো না হলেও মাঝেমধ্যে মিয়ানমারের দুই একজন সেনা কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে দায় সেরেছেন। ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্প ছিলেন একেবারে খড়গ হস্ত। একের পর এক নিষেধাজ্ঞা আরোপ ও ইরানের সম্পদ জব্দ করেছেন।
কোন দিকে গড়াবে মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি:
ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের স্বার্থের দিকে দৃষ্টি রেখে তার মধ্যপ্রাচ্য নীতিকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন। ট্রাম্পের বিদায়লগ্নেও গত ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে তাঁর নিজ জামাতা ও মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত জারেড কুশনারকে মধ্যপ্রাচ্যে পাঠিয়েছিলেন। ট্রাম্পের পুরো আমল জুড়েই সৌদি আরব এবং দেশটির যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমান বিশেষ সুবিধা ভোগ করেছেন। কিন্তু ইরানের সাথে ট্রাম্পের সম্পর্ক ছিল সাপে-নেউলে। ইরানকে জব্দ করতে শুধু একের পর এক নিষেধাজ্ঞাই আরোপ করেননি, পারস্য উপসাগরে মোতায়েন করেছেন বিমানবাহী রণতরি। সেখানে প্রায়ই চলে মার্কিন যুদ্ধ জাহাজের মহড়া। গত জানুয়ারির শুরুতে বাগদাদ বিমানবন্দরে বোমা হামলায় ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে হত্যা করেছেন ট্রাম্প। গত মাসে ইরানের পরমাণুবিজ্ঞানী মোহসেন ফাখরিজাদেহকে হত্যার বিষয়ে ইসরায়েলকে ট্রাম্পই মদদ দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়া কিছুদিন আগে ইরানের প্রধান পরমাণু স্থাপনায় বিস্ফোরণের ঘটনায়ও ট্রাম্প তথা যুক্তরাষ্ট্রের হাত ছিল বলে ধারণা করা হয়।
ওদিকে তুরস্কের সাথেও ট্রাম্পের সম্পর্ক ভালো ছিল না। ইসরায়েলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানের সাথে শান্তি চুক্তির ঘোর বিরোধী তুরস্ক। এ সব প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখেই মার্কিন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণ করছেন। ট্রাম্প আমলে মধ্যপ্রাচ্যে যে নজিরবিহীন পরিবর্তন তা কি বাইডেন ধরে রাখবেন, না পরিবর্তন আনবেন। অবশ্য বাইডেন আগেই জানিয়েছেন, ট্রাম্প আমলে যে সব মুসলিম দেশের জনগণের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল, তা তিনি বাতিল করবেন।
ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন প্রশাসন থেকে ব্যাপক রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন পেয়েছে সৌদি আরব। সৌদি নেতৃত্বে উপসাগরীয় দেশগুলোকে কাছে টানার চেষ্টা করেছে। এ সবই করেছে উপসাগরীয় অঞ্চলে একটি ইরান বিরোধী জোট গঠনের জন্য। ইরানকে রুখতে সৌদি আরবও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেছে। এদিকে তালেবানের সঙ্গেও সম্পর্ক উন্নতির চেষ্টা করেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আলোকেই এখন আফগান সরকার ও তালেবানের মধ্যে সরাসরি আলোচনাও শুরু হয়েছে। আফগানিস্তানে তিন দশকের যুদ্ধ অবসানে চলছে জোর চেষ্টা। তবে এই শান্তি আলোচনার মাঝেই তালেবান ও আফগান সরকারের মধ্যে হামলাও অব্যাহত রয়েছে। এ সবের মাঝেই আফগানিস্তান ও ইরাক থেকে সেনা কমানোর ঘোষণা দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
কোনো সন্দেহ নেই ট্রাম্প আমলে মুসলিম বিশ্বে মার্কিন পররাষ্ট্রনীতির সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে মধ্যপ্রাচ্যে। এখন জো বাইডেন আমলে পরিস্থিতি কোন দিকে গড়াবে এটাই দেখবার বিষয়। বাইডেন চাইবেন মধ্যপ্রাচ্যে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির গণতন্ত্রসুলভ আচরণ। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যে প্রধান সংকটই গণতন্ত্রের। নির্বাচনী প্রচারের সময় জো বাইডেন বলেছিলেন, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বেশি গুরুত্ব পাবে মানবাধিকার ইস্যু। এ নীতি বাস্তবায়ন হলে ব্যাপক প্রভাব পড়বে একনায়কতান্ত্রিক মুসলিম দেশগুলোয়। তবে ধারণা করা যায়, কয়েকটি দেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নতি হবে। আবার কয়েকটি দেশের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটবে।
সম্প্রতি লেবাননের সংবাদপত্র আন্নাহার আল আরাবির কলাম লেখক হিশাম মেলহেম তাঁর এক নিবন্ধে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটরা জয়ী হলে সৌদি আরব, মিসর, এবং তুরস্কের শাসকদের জন্য ওয়াশিংটনে কোনো বন্ধু থাকবে না বললেই চলে। কিন্তু তাঁর এ কথা শেষ পর্যন্ত পুরোপুরি ঠিক নাও হতে পারে। এ কথা সত্যি যে, এই তিন দেশেরই মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। তুরস্কে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চলছে। অভ্যুত্থানে জড়িত থাকার অভিযোগ এবং যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা নির্বাসিত দেশটির ধর্মীয় নেতা ফাতহুল্লাহ গুলেনের সমর্থক বিপুল সংখ্যক সেনা ও বেসামরিক ব্যক্তিকে জেল অথবা মৃত্যুদ- দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এ ছাড়া তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বিচ্ছিন্নতাবাদী কুর্দিদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের। অন্যদিকে এরদোয়ান ইসরায়েলের ঘোর বিরোধী ও ফিলিস্তিনের জোরালো সমর্থক। তিনি ইসরায়েলের সাথে আমিরাত ও বাহরাইনের শান্তি চুক্তির ঘোর বিরোধী এবং এ ব্যাপারে সরব কণ্ঠ।
এদিকে মিসরের পরিস্থিতিও খুব ভালো নয়। সেখানেও চলছে ভিন্নমতাবলম্বীদের দমন-পীড়ন ও কারাদ-। তা সত্ত্বেও মিসরের সঙ্গে বাইডেন আমলে সম্পর্ক ততটা খারাপ হবে না বলেই মনে করেন বিশ্লেষকেরা। কারণ ভূরাজনৈতিক স্বার্থ। নিজে সরে গিয়ে নিশ্চয়ই সেখানে চীন ও রাশিয়াকে তিনি ঢুকতে দেবেন না।
নতুন বাস্তবতার মুখোমুখি সৌদি আরব:
নতুন পরিস্থিতিতে সৌদি আরবের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিক থাকবে কি? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে আগের মতো সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক ততটা স্বাভাবিক কিংবা উজ্জ্বল নাও থাকতে পারে বাইডেন প্রশাসনের। সৌদি-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের পুনর্মূল্যায়ন হতে পারে। কারণ সৌদি আরবের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এমনিতেই মার্কিন ডেমোক্র্যাটরা সোচ্চার। বিশেষ করে যুবরাজ সালমানের জন্য বাইডেন প্রশাসন কিছুটা ক্ষতির কারণ হতে পারে।
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকা-ে জড়িত থাকার সন্দেহের তীর যুবরাজ সালমানের দিকে থাকলেও ট্রাম্প এ বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে যুবরাজকে বিশেষ সুবিধা দিয়েছেন।
ইয়েমেনে সৌদি মিত্র জোটের হামলা সত্ত্বেও সৌদি আরবে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি বাড়িয়েছেন। বিনিময়ে যুবরাজ সালমানও বহু শরয়ী নীতি শিথিল করেছেন। সৌদি নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার, বিদেশি অবিবাহিত নারী-পুরুষের একই হোটেল কক্ষে থাকার অনুমতি, এমনকি নারীদের ফুটবল খেলারও অনুমতি দিয়েছেন। এভাবে সালমান ট্রাম্প প্রভাবে সৌদি নীতিতে নজিরবিহীন পরিবর্তন এনেছেন। এক কথায় ট্রাম্পের সাথে সৌদি বাদশাহ এবং যুবরাজের সম্পর্ক ছিল খুবই সৌহার্দপূর্ণ। কিন্তু বাইডেন এখন কীভাবে এগোবেন? বাইডেন সৌদি আরবকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় থেকে বিচ্ছিন্ন রাষ্ট্র হিসেবেই দেখে থাকেন। এ ব্যাপারে কূটনীতিক মহলও মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রের নিকট থেকে যুবরাজ সালমানের সুবিধা পাওয়ার দিন শেষ। এখন সৃষ্টি হবে দর কষাকষি পরিস্থিতির। এ বিষয়ে যুবরাজ মুহাম্মাদ বিন সালমানও বেশ সচেতন। তিনি নিশ্চয়ই নিজেকে কিছুটা বদলানোর চেষ্টা করবেন। ইতোমধ্যেই কাতারের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলার বিষয়ে তাঁকে আগ্রহী দেখাচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্কের সঙ্গেও ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে চাইছেন। তুরস্কের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে আড়ালে যোগাযোগও শুরু হয়েছে।
সম্পর্ক উন্নতি হতে পারে ইরানের সঙ্গে:
ধারণা করা হচ্ছে ট্রাম্পের ইরান নীতি থেকে সরে এসে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নীতিকেই অনুসরণ করবেন জো বাইডেন। ট্রাম্প গত চার বছরে ইরানের সঙ্গে যে নীতি অনুসরণ করে এসেছেন, তাতে দুই দেশের সম্পর্ক এখন তলানিতে। জো বাইডেন ইরানের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক স্থাপন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, ইরানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হলে ইরান পুনরায় পরমাণু চুক্তির শর্তসমূহ পালনে ফিরে আসবে। নির্বাচনের পূর্ব থেকে বাইডেনও বলে এসেছেন, জিতলে তিনি ইরানের সাথে ছয়টি দেশের করা পারমাণবিক চুক্তিতে আবারো যোগ দেবেন। সাবেক ডেমোক্র্যাট প্রেসিডেন্ট ওবামার উদ্যোগে এই চুক্তি হলেও ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঐ চুক্তি থেকে বের হয়ে আসেন। এদিকে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার কিংবা শিথিলের বিষয়ে ইউরোপীয় দেশগুলোরও চাপ রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর। কিন্তু জো বাইডেনের পক্ষে তা করা কতটা সম্ভব হবে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে বিশ্লেষকদের মনে।
পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক:
ট্রাম্প আমলে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক যেমন খুব উন্নতি হয়নি, তেমনি খুব অবনতিও হয়নি। যদিও সন্ত্রাসীদের আশ্রয়, সন্ত্রাসী হামলায় মদদ ও অর্থায়ন ইত্যাদি অভিযোগ ও বরাবরই চাপ ছিল পাকিস্তানের ওপর। সাময়িকভাবে আর্থিক সহায়তাও এক সময় স্থগিত ছিল। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক স্বার্থেই যেমন সৌদি আরব, উপসাগরীয় দেশগুলো এবং ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতি ঘটিয়েছে, তেমনি একই কারণে ইরানকে করেছে কোনঠাসা, পাকিস্তানকে রেখেছে চাপে। কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তানের কণ্ঠ সব সময় সোচ্চার থাকলেও ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা ট্রাম্প এ নিয়ে কখনই সরব হয়নি। যেটা সরব হয়েছে উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে। আগামীতেও ভারতীয় বংশোদ্ভূত ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের কারণে পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের সঙ্গেই যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক থাকবে উজ্জ্বল। কাশ্মীর পরিস্থিতি নিয়েও ততটা সোচ্চার হবে না যুক্তরাষ্ট্র। চীনকে মোকাবিলায় ভারত অনেকদিন ধরেই যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত সহযোগী। সেই নীতিতে পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ভাগ্য পরিবর্তন হবে কি ফিলিস্তিনের?
১৯৬৭ সালে যুদ্ধে পশ্চিম তীর ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে নেয় ইসরায়েল। তখন থেকেই এখানে অবৈধ বসতি গড়ে তুলছে দেশটি। বর্তমানে এসব বসতিতে বাসিন্দার সংখ্যা প্রায় ৭ লাখ। এদিকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে অবৈধ ইহুদি বসতি সম্প্রসারণে এক নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে ইসরায়েল। এই পরিকল্পনার আওতায় এই এলাকায় নতুন নতুন মহাসড়ক, পাতালপথ ও ওভারপাস নির্মাণ করবে দেশটি। এ পরিকল্পনা কার্যকর হলে কয়েক বছরের মধ্যে ওইসব বসতির বাসিন্দারা জেরুজালেম ও তেলআবিবে অবাধে যাতায়াত করার সুযোগ পাবেন। অন্যদিকে নিজেদের শহরগুলোর এক বিরাট অংশে অবরুদ্ধ হয়ে পড়বেন ফিলিস্তিনিরা। বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ট্রাম্প ইসরায়েলের জন্য যা করে গেছেন তা থেকে বাইডেন খুব একটা সরবেন বলে মনে হয় না। জেরুজালেম থেকে মার্কিন দূতাবাস ফের নিশ্চয় তেলআবিবে ফিরিয়ে নেবেন না তিনি। পশ্চিম তীরের ইসরায়েলের একটা অবৈধ বসতিও নিশ্চয় গুড়িয়ে দেবেন না।
সবশেষে এ কথা বলা যায়, বাইডেন নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ মুসলিম দেশগুলোতে এখন যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক স্বার্থেই অনেকটা কেটে যেতে পারে। মুখে যাই বলুন, প্রথাগত ভারসাম্য রক্ষার নীতি থেকে সরে যাবেন না বাইডেন। উপসাগরীয় অঞ্চলেও প্রভাব হারাতে চাইবেন না। সিরিয়া-ইরাক-আফগানিস্তান থেকেও একেবারে সরবেন না। তবে ইয়েমেন যুদ্ধ অবসানে অগ্রগতি হতে পারে। কিন্তু ফিলিস্তিন কতটা লাভবান হতে পারবে তা একেবারেই অনিশ্চিত।
লেখক: সাংবাদিক, দৈনিক প্রথম আলো