মাঝে মাঝেই দক্ষিণ থেকে ছুটে আসা ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত আর উড়ে আসা ড্রোন হামলায় প্রকম্পিত হয়ে ওঠে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ অথবা দেশটির অন্য কোনো শহর বা অঞ্চল। আগুন জ্বলে বিভিন্ন স্থাপনায় ও তেলক্ষেত্রে। এ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন আসে ইয়ামান থেকে। ইয়ামানের হুতি বিদ্রোহীরা এ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে। ড্রোন হামলাও হুতিদের। অনেক সময় এ ক্ষেপণাস্ত্র গুলি করে ভূপাতিত করে সৌদি আরব। আর সৌদি আরব থেকেও একইভাবে ইয়ামানে ছুটে যায় সৌদি জোটের যুদ্ধ বিমান। নির্বিচারে চলে বোমা বর্ষণ হুতিদের অবস্থান লক্ষ্য করে। আর অনেক সময়ই তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে প্রাণহানি ঘটে বেসামরিক লোকজনের। এভাবেই চলছে গত ছয় বছর ধরে। কিন্তু কারা এই হুতি? আর কেনই বা এ লড়াই?
কারা এই হুতি
আসলে ইয়ামানে এ লড়াইয়ের শুরু হয় ‘আরব বসন্ত’ দিয়ে। কিন্তু কি এই ‘আরব বসন্ত’? ২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর নিজের গায়ে আগুন জ্বেলে বিপ্লবের মশাল জ্বেলেছিলেন তিউনিসিয়ার যুবক বাওয়াজিজি। তৎকালীন তিউনেশিয়ার শাসক জয়নাল আবেদিন বেন আলীর আমলে দুর্নীতি, বেকারত্ব, রাজনৈতিক নিপীড়নের বিরুদ্ধে ছিল এই বিদ্রোহ। আর আরব দেশগুলিতে গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা কায়েমে এই বিদ্রোহে ছিল পশ্চিমা দেশগুলোর ইন্ধন। ক্রমে এই বিদ্রোহের আগুন আরব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তিউনিসিয়ার পর মিসর, লিবিয়া, ইয়ামান, বাহরাইন ও সিরিয়া। বিদ্রোহের আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে যায় দেশগুলো। এই বিদ্রোহে পতন ঘটে তিউনেশিয়ার শাসক জয়নাল আবেদীন বেন আলীর, পতন ঘটে লিবিয়ার একসময়ের ‘সবুজ বিপ্লবের’ নায়ক এবং পরবর্তীতে ‘স্বৈরশাসক’ কর্নেল মুয়াম্মার গাদ্দাফীর, পতন ঘটে মিসরের লৌহমানব হোসনী মুবারকের। আর এই ‘আরব বসন্তে’র হলকা ছড়িয়ে পড়ে ইয়েমনেও। দেশ ছেড়ে পালান ইয়ামানের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহ। কিন্তু গত ছয় বছরেও দেশগুলো কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি। বরং ঘটেছে উল্টোটা। আজও গৃহযুদ্ধে ক্ষতবিক্ষত ইয়ামান, লিবিয়া ও সিরিয়া। শান্তি আসেনি তিউনেশিয়া ও মিসরেও। ইয়ামানে ‘আরব বসন্তের’ শুরু ২০১১ সালে। এ বছরেই প্রচ- বিক্ষোভের মুখে দেশটির দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহকে তাঁর ডেপুটি আবদ-রাব্বু মানসুর হাদীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে বাধ্য করা হয়। ইয়ামানে টানা ৩৩ বছর ক্ষমতায় ছিলেন আবদুল্লাহ সালেহ। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর হাদীকে অনেকগুলো সংকটের মুখোমুখি হতে হয়। আল কায়েদার হামলা, দক্ষিণে বিছিন্নতাবাদী আন্দোলন, সালেহের প্রতি অনেক সামরিক কর্মকর্তার আনুগত্য। এছাড়া ইয়ামান তখন আগের সরকারের রেখে যাওয়া দুর্নীতি, খাদ্যাভাব ও বেকারত্বের উচ্চ হারে জর্জরিত। এই সুযোগে দেশটির শিয়া হুতিরা নতুন করে বিদ্রোহ শুরু করে। নতুন প্রেসিডেন্ট হাদীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ইয়ামানের উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ এবং এর আশপাশের এলাকা দখল করে নেয় হুতিরা। ইয়ামানের অবস্থা এখন আরও ভয়ানক। তথাকথিত ‘আরব বসন্তের’ একযুগ পরও দেশে শান্তির লেশ নেই। কেবল যুদ্ধ আর যুদ্ধ। একদিকে দেশটিতে সক্রিয় আইএস ও তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী আল-কায়েদা। অন্যদিকে শিয়া সম্প্রদায়ের বিদ্রোহী হুতি গোষ্ঠী। হাদী ক্ষমতা গ্রহণের পর হুতিরা হাদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করে। রাজধানী সানাসহ দেশটির এক বড় অংশ এখন তাদের দখলে। প্রেসিডেন্ট হাদী রাজধানী সানা ছেড়ে এডেনে তাঁর শাসনুান্ত্রিক সদর দপ্তর স্থাপন করেন। হুতিরা সানায় নিজেদের অবস্থান ধরে রেখেছে এবং সেখান থেকেই সৌদি আরবে মর্টার আর ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে মারছে। চালাচ্ছে ড্রোন হামলা। আবদুল্লাহ সালেহের মতো এক পর্য়ায়ে প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদীও দেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন। হাদীর সমর্থনে এগিয়ে আসে সৌদি আরব। হুতিরা একদিকে এডেন ভিত্তিক মনসুর হাদীর সরকার উৎখাতে লড়াই, অন্যদিকে সৌদি আরবে হামলা চালিয়ে আসছে। সৌদি জোটও হুতিদের অবস্থান লক্ষ্য করে ফেলছে বোমা।
সৌদি আরব যেভাবে জড়িয়ে পড়ে ইয়ামান যুদ্ধে
ইয়ামানে হাদীর দুর্বল সরকার এবং হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে সংঘাতের শুরু ২০১৪ সালে। আর হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন পশ্চিমা সেনা সমর্থিত জোটের অভিযান শুরু হয় ২০১৫ সালে। প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদীর সমর্থনে সৌদি নেতৃত্বাধীন এ জোটের ইয়ামানে অভিযান। ২০১৫ সালের মার্চ মাসে জোট ইয়ামানে বিমান থেকে বোমাবর্ষণ শুরু করে। নির্বাসনে থেকেই হাদী এই অভিযানে সমর্থন দেন। সৌদি আরবের মূল লক্ষ্য হুতি বিদ্রোহীদের উৎখাত। সৌদি আরবের আশঙ্কা, হুতি বিদ্রোহীরা ইয়ামান দখল করলে শিয়া নেতৃত্বাধীন ইরানের অনুগত হয়ে যাবে।শিয়া শাসনাধীন ইরান হচ্ছে সুন্নি শাসনাধীন সৌদি আরবের বড় আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী। অন্যদিকে হুতিদের সমর্থনে এগিয়ে আসে ইরান। অভিযোগ রয়েছে হুতিদের অস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে সহায়তা করছে ইরান। সংযুক্ত আরব আমিরাতেরও সমর্থন পাচ্ছে হুতিরা। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকেরা মনে করেন, ইয়ামানে চলা যুদ্ধ এক অর্থে ইরান ও সৌদি আরবের যুদ্ধ।দিনে দিনে ইয়ামানে সংঘাতের তীব্রতা বৃদ্ধি পায় যখন সৌদি আরব ও আটটি আরব দেশের জোট হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে বিমান হামলা শুরু করে। এর আগে সৌদি সরকার অন্য আরব দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপের এমন অভিযোগ থাকলেও এই প্রথম তারা একটি আরব দেশের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানই সৌদি নীতিতে এ ধরনের বড় পরিবর্তন নিয়ে আসেন। এভাবেই সৌদি আরবের ইয়ামান যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার সূচনা। আর এতে সৌদি সরকার এতদিন পশ্চিমা দেশগুলোর সমর্থন ও অস্ত্র সহযোগিতা দুইই পেয়েছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এতে সমর্থন দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি সৌদির পক্ষ নেয় এবং দেশটিতে অস্ত্র বিক্রি বাড়ায়। ২০১৫ সালে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের অভিযানে সমর্থন দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এর একটি কারণ ছিল, ইরানের সাথে পরমাণু চুক্তির কারণে সৃষ্ট যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র সৌদি আরবের ক্ষোভ সামাল দেওয়া। একই ভূমিকা নেয় ব্রিটেন ও ফ্রান্সও। ব্রিটেনও সৌদিতে অস্ত্র বিক্রি বাড়ায়। কিন্তু আজ ছয় বছরেও সৌদি সরকার মনসুর হাদীকে ইয়ামানের ক্ষমতায় বসাতে পারেনি। বরং দিনে দিনে হুতিদের হামলা আরও তীব্র হয়েছে। আর ইয়ামানে বছরের পর বছর ধরে এই যুদ্ধের কারণে মূল্য দিতে হচ্ছে দেশটির সাধারণ মানুষকে। ইতিমধ্যে দেশটিতে এক লক্ষ ১০ হাজার লোক নিহত হয়েছেন। নিহতদের ৬৫ শতাংশের মৃত্যুর কারণ সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের ফেলা বোমা। আর বাকিদের মৃত্যুর কারণ হুতি বিদ্রোহীরা। আঞ্চলিক ও ভূরাজনৈতিক কারণে সৌদি আরব চায় ইয়ামানে তার সমর্থিত সরকার। ভূরাজনৈতিক কারণে গুরুত্বপূর্ণ এই দেশটি যদি হুতি তথা বিরোধীদের হাতে চলে যায় তা হলে কিছুটা কোণঠাসা হয়ে পড়বে সৌদি আরব। এছাড়া লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরের মাঝখানে দেশটির অবস্থান। এই নৌপথ দিয়েই বিশ্বের সিংহভাগ তেলবাহী জাহাজ চলাচল করে। তাই ইয়ামান যার নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তার পক্ষে তেলসম্পদের ওপর খবরদারিও সহজ হবে। ঠিক এই কৌশলগত কারণেই ইয়ামান সবার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ইয়ামানে মানবিক সংকট
জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ইয়ামান এখন শতাব্দীর সবচেয়ে বড় দুর্ভিক্ষ ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখে। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বহুবার বলেছেন, সাম্প্রতিক দশকে যুদ্ধের কারণে বিশ্বের মধ্যে ইয়ামানে সবচেয়ে বড় মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হয়েছে। বাড়ি-ঘর ছেড়ে হাজার হাজার ইয়েমেনি জনগণ উদ্বাস্তু হয়ে দিন কাটাচ্ছে আশ্রয় শিবিরে। খাদ্য সংকট চরমে। দেশ জুড়ে বিরাজ করছে দুর্ভিক্ষ। ইয়ামানের ৮০ শতাংশ অর্থাৎ আড়াই কোটি মানুষের মানবিক সহায়তা ও সুরক্ষা প্রয়োজন। এই ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় কাটাতে বিশ্বের সহযোগিতা চেয়েছে জাতিসংঘ। সেখানে জনসংখ্যার ৮০ শতাংশই মানবিক সহায়তায় বেঁচে আছে। সেভ দ্য চিলড্রেন ও ইউনিসেফের মতে সেখানে অধিকাংশ শিশু, নারী ও পুরুষ অপুষ্টির শিকার। এছাড়া প্রাণ বাঁচাতে ঘর ছেড়েছে দেশটির প্রায় অর্ধকোটি মানুষ। যুদ্ধের কারণে সেখানে কোনো ত্রাণসহায়তা পাঠাতে পারছেনা রেড ক্রিসেন্ট ও আন্তর্জাতিক ত্রাণসহায়তাগোষ্ঠী। ইউএনডিপির দেওয়া সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান গৃহযুদ্ধ যদি ২০২২ সাল পর্যন্ত চলে, তবে ইয়ামান পরিণত হবে পৃথিবীর সবচেয়ে দরিদ্র দেশে। বর্তমানে দেশটিতে সবচেয়ে দুর্ভোগে রয়েছে শিশুরা। কংকালশার দেহ, ক্ষুধা আর পুষ্টিহীনতার চরম শিকার এই শিশুরা। ন্যূনতম মানবিক সহায়তা থেকেও বঞ্চিত শিশুরা। সাহায্য সংস্থাগুলোর হিসেব মতে বর্তমানে জরুরি ভিত্তিতে দেশটিতে ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন। যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো প্রয়োজনীয় ও জরুরি ত্রাণসহায়তা সেখানে পৌঁছাতে পারছে না।
ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটি (আইআরসি) বলছে, এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে চলতি বছর পরিস্থিতির আরও ভয়াবহ অবনতি হতে পারে। সম্প্রতি সংস্থাটি ২০২১ সালে যেসব দেশের জরুরি ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন তার একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। এতে দেখা যায়, বর্তমানে সবচেয়ে মানবিক সংকটে রয়েছে ইয়ামান। এর পরই অবস্থান আফগানিস্তানের। তারপর অবস্থান সিরিয়ার। আর এই তিনটি দেশই মুসলিম।
ইয়ামান যুদ্ধ বন্ধে জাতিসংঘের আহ্বান
ইয়ামান যুদ্ধ শুরুর পর থেকে জাতিসংঘ যুদ্ধ বন্ধ এবং আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনের আহ্বান জানিয়ে আসছে সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের প্রতি। করোনা মহামারি শুরু হলে যুদ্ধের কূটনৈতিক সমাধানের জন্য সৌদি যুবরাজের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। তিনি বলেছেন, এখন যুদ্ধ বন্ধ করে করোনাভাইরাস মোকাবিলার উপায় খুঁজতে হবে সবাইকে। লিবিয়া, সিরিয়া এবং ইয়ামানে যুদ্ধ বন্ধ করে করোনা পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তার দিকে এখন মনোনিবেশ করা উচিত। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের হুমকি সমস্ত যুদ্ধ-সংঘাতের চেয়ে বড় হুমকি। এদিকে মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে জাতিসংঘ মানবাধিকার সংস্থা ও রেডক্রিসেন্ট ও মানবাধিকার কর্মীরাও যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। এছাড়া গত ডিসেম্বরে ২০২১ সালের মধ্যে ইয়ামান সরকার ও ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়ামানের সংকট নিরসনে সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানান জাতিসংঘের বিশেষদূত মার্টিন গ্রিফিতস। এতদিন কোন পক্ষই এসব তেমন আমলে নেয়নি। তবে সম্প্রতি সৌদি আরব শর্তাধীনে এক নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব উপস্থান করেছে। এছাড়া ইয়ামানে মানবিক সহায়তা প্রদানের জন্য জাতিসংঘকে বিভিন্ন সময়ে অর্থ দিয়ে এসেছে সৌদি সরকার।
যুদ্ধ বন্ধের ডাক বাইডেনের
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি ইয়ামান যুদ্ধ বন্ধের জন্য সৌদি আরবের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সৌদিতে অস্ত্র বিক্রিও বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিতে এ এক বড় পরিবর্তন। বাইডেন বলেন, ইয়ামান যুদ্ধে সৌদি আরবের কাছে অস্ত্র বিক্রিসহ সকল সমর্থন প্রত্যাহার করেছেন তিনি। কারণ এই যুদ্ধ মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে। এই যুদ্ধের অবসান করতে হবে। বাইডেন ইয়ামানে বিশেষ দূত হিসেবে টিমুথি লেনডারকিংকে নিয়োগ দিয়ে বলেন, এই দূত জাতিসংঘের যুদ্ধ বিরতি প্রচেষ্টা এবং সরকার ও হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তি আলোচনায় সহায়তা করবে। তিনি বলেন, যুদ্ধের অবর্ণনীয় দুর্দশায় থাকা ইয়ামানের জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করবে। এছাড়া বাইডেন হুতিদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসীদের কালো তালিকা থেকে মুক্ত করেছে। তবে এর পরই দুই শীর্ষ হুতি নেতাকে ফের কালো তালিকাভুক্ত করেছে। তবে ইয়ামানে যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি ইয়ামানে ১৯ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলারের সহায়তার ঘোষণা দিয়েছে। একই সাথে নতুন মার্কিন প্রশাসন বলেছে, ‘শুধু সাহায্য দিলে সংঘর্ষ থামবে না। যুদ্ধ বন্ধ হলেই কেবল ইয়ামানে মানবিক সংকটের শেষ হতে পারে। এদিকে বাইডেনের যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান সত্ত্বেও ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের মোকাবিলায় ইয়ামান সরকারেকে সামরিক ও রাজনৈতিক সহযোগিতা দেওয়া অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছে সৌদি আরব। আর ইরান জানিয়েছে, ইয়ামান সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক মহলের যেকোনো পদক্ষেপকে সমর্থন করবে তেহরান।
যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব সৌদির
এতদিন সৌদি আরব যুদ্ধবিরতিতে সাড়া না দিলেও গত ২২ মার্চ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান আল সৌদ। এতে সৌদি আরব বলেছে, চলমান সংঘাতের অবসান ঘটাতে ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহীদেরও যুদ্ধবিরতি এবং রাজনৈতিক সমঝোতাসহ চুক্তিসহ চুক্তিতে আসতে হবে। সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যদি হুথি বিদ্রোহীরা উদ্যোগের শর্তগুলো মানতে সম্মত হয়, তাহলে সৌদি আরবও জাতিসংঘ-পর্যবেক্ষণাধীন দেশটিতে (ইয়ামান) যুদ্ধবিরতি মেনে চলবে। তবে হুতির গোষ্ঠীটির এক কর্মকর্তা এই উদ্যোগটিকে ‘গুরুতর বা নতুন নয়’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এই মুহূর্তে যা প্রয়োজন
মানব ইতিহাসের অন্যতম প্রাচীন বসতির দেশ ইয়ামান। ইসলামের আলোও দেশটিতে দ্রুত পৌঁছায়। কিন্তু সেই ইয়ামান এখন গৃহযুদ্ধে ও সৌদি মিত্র জোটের হামলায় পুরোপুরি বিপর্যস্ত। বছরের পর বছর ধরে হাদীর সমর্থনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট বিমান হামলা চালিয়েও হুতিদের হটাতে কিংবা হাদীকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে পারেনি। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক মহল মনে করে ইয়ামানের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সুরক্ষায় অবিলম্বে সকল পক্ষকে যুদ্ধ বন্ধ করে কূটনৈতিক সমাধানের পথে আসা উচিৎ। জাতিসংঘের উদ্যোগে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের মতো পার্থক্য নিরসন করে বাস্তবসম্মত পথে এগিয়ে আসতে হবে বর্তমান ইয়ামান সরকার ও হুতি বিদ্রোহীদের।একই সঙ্গে সৌদি জোটকে হামলা বন্ধ করতে হবে। সরকারের সমর্থক বাহিনী ও হুতি বিদ্রোহীদের সংঘর্ষেরও ইতি টানতে হবে। কিন্তু সবাই চাইলেও বিবদমান কোনো পক্ষেরই যুদ্ধ বন্ধের উদ্যোগ নেই। কে জানে সামনে ইয়ামানের জনগণের ভাগ্যে আরও কত দুর্ভোগ অপেক্ষা করছে?